ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক রুডইয়ার্ড কিপলিঙের বিখ্যাত উপন্যাস ‘মোগলি’র কথা আমরা প্রায় সবাই জানি , এই মোগলিকে ঘিরে অনেক অনেক কার্টুন,সিনেমা হয়েছে , বন্যপশুদের মাঝে এক মানবসন্তানের বেড়ে ওঠার কাহিনি। পশুদের মতোই আচার-আচরণ, ঝাঁকরা ঝাঁকরা চুলের সেই মানবশিশুই কিপলিঙের উপন্যাসের দৌলতে যেন জীবন্ত চরিত্র হয়ে উঠেছে।
আপনি জানেন কি, বাস্তবেও এক ‘মোগলি’র খোঁজ মিলেছিল। আর সেই ‘মোগলি’কে পাওয়া গিয়েছিল ভারতেই। তা-ও আবার উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার অনেক আগেই।
বাস্তবের ‘মোগলি’র নাম দিনা সানিচর। এই নাম রাখা হয়েছিল নেকড়ে পরিবার থেকে উদ্ধার করার পরে, উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের জঙ্গলে তাঁর খোঁজ মিলেছিল ১৮৭৩ সালে
শিকারিরা দাবি করেছিলেন, এক দল নেকড়ের মাঝে ওই মানবশিশুকে দেখতে পেয়েছিলেন তাঁরা। চার হাত-পায়ে নেকড়ের মতোই হাঁটছিল সে। নেকড়েদের মাঝে মানবশিশুকে দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। শিকারিদের দাবি, নেকড়েদের সঙ্গেই মানবশিশুটি গুহার মধ্যে ঢুকে যায়। তখন তাঁরা স্থির করেন, শিশুটিকে নেকড়ের দলের হাত থেকে উদ্ধার করবেন। কিন্তু উদ্ধারকাজ অত সহজ ছিল না বলে দাবি করেছেন শিকারিরা। ওই দলে যে মেয়ে নেকড়েটি ছিল, সেটিকে হত্যা করার পরই শিশুটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হত।
কিন্তু বন্যজনগৎ থেকে ওই মানবশিশুকে উদ্ধার সভ্যতার আলোয় নিয়ে এসে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হল। আগরার কাছে একটি অনাথ আশ্রমে পাঠানো হয়েছিল মানুষের আদবকায়দা শেখানোর জন্য।
সেই অনাথ আশ্রমেই ওই মানবশিশুর নামকরণ হয় দিনা সানিচর। কিন্তু সানিচরকে মানুষের আদবকায়দা শেখানো বড় কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পোশাক পরতে চাইত না। ভাষা বোঝা দূর অস্ত্, হাড়ে ঘষে দাঁত ধার করত সে। আর খাবারের মধ্যে শুধু মাংসই খেত।
ওয়েন ডেনিস নামে এক শিশু মনোবিদ দিনাকে নিয়ে গবেষণা করেন। ১৯৪১ সালে আমেরিকান জার্নাল অব সাইকোলজি-তে তিনি লিখেছিলেন যে, মানুষের সংস্পর্শে কোনও দিনই আসেনি দিনা। শুধু তাই-ই নয়, শীত, গ্রীষ্ম কোনও কিছুই তাঁর শরীরে প্রভাব পড়ত না।
ডেনিসের দাবি, অনাথ আশ্রমে থাকাকালীন আশ্রমের অন্য শিশুদের সঙ্গে মেলামেশা করত না দিনা। তার মতোই আরও একটি মানবশিশুকে উদ্ধার করে ওই অনাথ আশ্রমে নিয়ে আসা হয়। দু’জনকে এক সঙ্গে রাখা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একটা অদ্ভুত বন্ধন তৈরি হয়।
তবে বেশি দিন বাঁচেননি দিনা। ৩৪ বছর বয়সে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ১৮৯৫ সালে। তবে মৃত্যু আগে তিনি মানুষের অনেক আদবকায়দা শিখে গিয়েছিলেন। পোশাক পরা শিখেছিলেন, কী ভাবে খেতে হয়, তা-ও শিখেছিলেন। ঘটনাচক্রে, ১৮৯৪ সালে অর্থাৎ দিনার মৃত্যুর এক বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল রুডইয়ার্ড কিপলিঙের উপন্যাস ‘দ্য জাঙ্গল বুক’।
You must be logged in to post a comment.