লেখাপড়ায় বা কাজে মনোযোগ দেয়া প্রায়ই বেশ কঠিন বেপার। মনোযোগ দিতে হলে যেরকম একাগ্রতা চাই সেটা সবসময় থাকে না। কি করলে মনোযোগ নিয়ে আসা সহজ হবে সে বেপারে চিন্তা ভাবনা সাধারণত করা হয় না। 

 

বিভিন্ন নেতিবাচক ঘটনার প্রভাবে অনেক সময় আমাদের মানসিক প্রশান্তি ব্যহত হয়। প্রায়ই দেখা যায় চারপাশের খারাপ, অসুন্দর, বিরক্তিকর মানুষগুলো আর ঘটনাগুলো আমাদের মানসিক শান্তি বিঘ্নিত করছে। অনেক সময় স্বাভাবিক জীবন ব্যহত হয়। রাগ, দুঃখ, হতাশা, বিরক্তি, উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তার মতো নেতিবাচক আবেগ ঘীরে ধরে আমাদের। ভিতর থেকে শক্তি আর উদ্যম কমিয়ে দেয়। কাজের গতি কমিয়ে দেয় আর তার সাথে কমিয়ে দেয় জীবনের অগ্রগতি।  

 

ইদানিং আমরা অনেকেই কমন একটা সমস্যায় ভুগিছি- over thinking বা অতিরিক্ত চিন্তা করা। আমাদের মস্তিষ্ক প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিন্তা করে চলে৷ অপ্রয়োজনে অকারণে অযথা চিন্তা সে আপনা আপনিই করতে থাকে। আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে সম্পূর্ণ স্ব্যংক্রিয়ভাবে মেন্টাল মুভি ব্যকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে। 

 

এই over thinking এর কারণ হচ্ছে over information। তথ্য প্রযুক্তি আর সোশাল মিডিয়ার যুগে, প্রয়োজনের বাইরে অনেকে অনেক বেশি তথ্য অনিয়ন্ত্রিতভাবে সারাক্ষণ আমাদের সামনে আসতে থাকে। আমাদের ব্রেইন ইনফরমেশন পছন্দ করে। ইনফরমেশন ব্রেইনকে চিন্তা করার খাবার যোগায়। ইনফরমেশন পেলে সে নিজে থেকে চিন্তা চালিয়ে নিয়ে যায়, তা প্রয়োজনের হোক বা অপ্র‍য়োজনের হোক। অযথা তথ্য উপাত্ত যেমন একদিকে চিন্তা ভাবনা দিয়ে মস্তিকস্কে ব্যস্ত রাখে, অন্যদিকে ব্রেইনের ফাংশনালিটি ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়। 

 

এক দিকে অতিরিক্ত চিন্তার ফলে নিদ্রাহীনতা, উচ্চরক্তচাপ, আলসারের মতো রোগ জন্ম নেয়, অন্যদিকে মানসিক প্রশান্তি, একাগ্রতা আর মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা ব্যহত হয়। এই ডিজিটাল যুগের প্রযুক্তি নির্ভর ব্যস্ত জীবন-যাত্রায় মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে আলাদাভাবে নজর দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

 

প্রচুর অযথা ইনফরমেশন, অপ্রয়োজনীয় স্মৃতি, বিভিন্ন নেতিবাচক মানুষ এবং ঘটনার প্রভাব প্রতিনিয়ত আমাদের মানসিক প্রশান্তি ব্যহত করছে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে আর জীবনের সুখ শান্তি নষ্ট করে এক একটা দিনকে কঠিন থেকে কঠিনতর করে চলেছে। এসব সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে কি করা যায়? পৃথিবী বলতে দেয়ার একটা অবাস্তব ইচ্ছা আমাদের অজান্তেই অবচেতন মনে উঁকি দেয়। বাস্তবে সেটা সম্ভব না, যুক্তিসঙ্গত না। 

 

পৃথিবীতে সমস্যা থাকবে, অসুবিধা থাকবে, খারাপ মানুষ থাকবে, তাদের খারাপ কথা থাকবে। জীবনে খারাপ ঘটনা থাকবে, ভয়ংকর দুর্যোগ আসবে যাবে এটাই স্বাভাবিক। এসবের মধ্যে পরিবর্তন আনা আপনার পক্ষে সম্ভব না। অযথা চেষ্টা করতে যাওয়া বৃথা। আপনি পরিবর্তন নিয়ে আসুন আপনার ভিতরের জগতে। বাইরের জগতের প্রভাব যাতে ভিতরের জগতে না পারে, সেই উপায় খুজতে হবে। সেটা কি করে সম্ভব? খুব সহজ। সব ক্ষতিকর আর অপ্রয়োজনীয় চিন্তা মন থেকে বের করে দিতে হবে। এটা করতে হলে আপনাকে কিছুটা সময় স্থির হয়ে বসতে হবে। মনের ভিতর যাওয়া আসা করতে থাকা চিন্তাগুলোর দিকে খেয়াল করতে হবে। দেখবেন সব চিন্তাই অতীত নাহয় ভবিষ্যতের৷ এই মুহূর্তে আপনি সম্পুর্নভাবে এখানে উপস্থিত না। খানিকটা অতীতে আর খানিকটা ভবিষ্যতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। 

 

অতীত আর ভবিষ্যতের অবাস্তব জগতে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ালে আজকে জীবনটা পুরোপুরি উপভোগ করবেন কি করে? প্রতিদিন কিছুটা সময়ের জন্য বাইরের জগত থেকে ছুটি নিন। ভিতরের জগতে প্রবেশ করে দেখে নিন আপনার চিন্তা ভাবনার গতি বিধি। দেখতে পাবেন প্রায় সব চিন্তা অপ্রয়োজনীয়। 

 

অতীত বা ভবিষ্যতের চিন্তা থামিয়ে দিয়ে এই মুহুর্তটিতে মনোযোগ দিন। সম্পুর্নভাবে বর্তমানে উপস্থিত থাকুন। এবার আপনি যেকোনো কাজে একশভাগ মনোযোগ দিতে পারবেন। এই মানসিক অবস্থাকে বলা হয় Awareness বা mindfulness বা স্বজাগতা। এই পর্যায়ে মনকে নিয়ে আসার পদ্ধতিটিকে আমরা মেডিটেশন বলি।

এখনকার জীবনে মানসিক প্রশান্তি আর সুস্থতা টিকিয়ে রাখার জন্য নিয়মিত মেডিটেশনের মাধ্যমে mindfulness চর্চা করা খুব দরকারি হয়ে পড়েছে।