ডাইনোসর। বিশাল আকৃতির ভয়ঙ্কর চেহারায় এক জীব যেটা অনেক অনেক বছর আগে পৃথিবীতে ছিল বলে আমরা জানি। বহু যুগ আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জীবিত কোনো ডাইনোসর চোখের সামনে দেখার কোনো সম্ভাবনা নেই ধরে নেয়া যায়। (আবার থাকতেও পারে। কে বলতে পারে জুরাসিক পার্কের মতো যদি হয়!)

অনেকে ডাইনোসর আর ড্রাগন কে এক করে ফেলে। ডাইনোসর একটি বিলুপ্ত প্রাণী। পৃথিবীর অনেক জাগায় অনেক রকম ডাইনোসরের ফোসিল বা জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। এখনো পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন কোনো ফোসিল উদ্ধারের খবর পাচ্ছি আর তার সাথে অনেক নতুন তথ্য সামনে আসছে।

আর ড্রাগন হচ্ছে মুখ থেকে আগুন বের করা একটি ফিকশনাল প্রানী। একে ম্যাজিক্যাল ক্রিয়েচার বলা হয়। ব্ল্যাক ম্যাজিক থেকে নাকি ড্রাগনের জন্ম হয়। বাস্তবে ড্রাগন বলে কোনো প্রানীর অস্তিত্ব এখনো পাওয়া যায় নি। তবে সী-ড্রাগন নামের একটি সামুদ্রিক প্রানী আছে যার দেহের আকৃতি একদম কাল্পনিক ড্রাগনের মতই।

ডাইনোসর (Dinosaur) শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে দুটি গ্রীক শব্দ dinos এবং saurus থেকে। Dinos অর্থ “terrible” বা “ভয়ঙ্কর” এবং Saurus অর্থ “Lizard” বা “টিকটিকি”। সুতরাং ডাইনোসর শব্দের মানে দাড়াচ্ছে – “ভয়ংকর টিকটিকি”। S.R. Owen ইংল্যান্ডের দক্ষিণ অর্ধে jurassic এবং cretaceous যুগের শিলাস্তরের মধ্যে পাওয়া সর্বোপ্রথম জীবাশ্মটি দেখে তার নাম দিয়েছিলেন “Dinosaur”।

আমাদের পরিচিত দেয়াল টিকটিকি সরীসৃপ শ্রেনীর একটি প্রানী। বুকে ভর দিয়ে চলা প্রানী, যারা স্থলচর বা পানিবাসী, কিন্তু অভ্যন্তরীণ নিষেক এবং স্থলভাগে প্রজনন সম্পন্ন করে, তারাই সরিসৃপ। ডাইনোসর হচ্ছে বিলুপ্ত সরীসৃপ।

পৃথিবীর সমগ্র সময়কালকে অনেকগুলো মহাযুগ(era) এবং যুগে(period) ভাগ করা হয়েছে। Palaezoic মহাযুগের শেষের দিকে পৃথিবীতে আদিম প্রকৃতির সরীসৃপ প্রাণীর আবির্ভাব ঘটে। তখন পৃথিবীতে পাখি বা কোনো মেরুদন্ডী প্রাণী ছিলনা।

পরবর্তীতে Mesozoic মহাযুগের Triassic, Jurassic এবং Cretaceous যুগগুলোতে সেই সরীসৃপদের সর্বোচ্চ অভিযোজন(adaptation), বিচ্ছুরণ(divergence) এবং সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটে।
তাদের অধিকাংশ ছিল বিশাল আকারের। তারা জল, স্থল, আকাশ সবজায়গাতে প্রবল প্রতাপের সাথে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। এদের আমরা আজ ডাইনোসর বলে ডাকি। এই প্রানীগোষ্ঠী সংখ্যা এবং বৈচিত্র‍্যে এতটাই ব্যাপক ছিল যে, তাদের ১৬ টি বর্গে ভাগ করা সম্ভব হয়েছিল। অথচ বর্তমান পৃথিবীতে জীবিত সরীসৃপ গোষ্ঠী আছে মাত্র ৫টি।

জীবাশ্মগুলোর মধ্যে যেমন অতিকায় ডাইনোসর ছিল(হাতির চেয়ে দশগুন বড়), তেমনই ছিল মুরগি আকারের ছোট ডাইনোসর। সরীসৃপরা(reptiles) তখন পৃথিবী জুরে এতো বেশি সংখ্যায় আর এত বৈচিত্র্যময় প্রজাতিতে বিরাজ করছিল যে, প্রানী বলতে তখন কেবল সরীসৃপ বা ডাইনোসরই ছিল।

আকাশে, মাটিতে, পানিতে সবজাগায় শুধু ডাইনোসর আর ডাইনোসর। তাদের কোনটা আকৃতিতে বিড়ালের মতো, কোনটা মুরগির মতো, কোনটা আবার হাঙ্গরের মতো।

এদের অনেকের মাথার উপর ক্রেস্ট এবং পিঠের উপর দিয়ে Frills বা কাটার মতো গঠন ছিল- যেমন Stegosaurs। সমুদ্রে থাকতো মাছের মতো দেখতে বিশাল Ichthyosaurus। পারমিয়ান যুগে ছিল কুমিরের মতো দেখতে Mesosaurus। অনেকটা কুকুরের মতো চার পায়ে চলা এক ডাইনোসর Cynognathus ছিল Triassic যুগে।
তখন তো পাখি ছিল না। আকশে উড়ে বেড়াতো বিশাল আকৃতির ডানাওয়ালা Pterosauria বর্গের বেশ কিছু প্রজাতির ডাইনোসর। জুরাসিক পার্ক মুভিতে এদের অনেক জনকে দেখা গেছে।

ডাইনোসর ডিম্বজ প্রকৃতির প্রানী। স্ত্রী প্রানী মাটিতে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়তো। সূর্যের তাপে ডিম ফুটে বাচ্চা হতো। এদের মধ্যে কেউ ছিল তৃণভোজী, কেউ মাংসাশী, কেউ কেউ আবার পতঙ্গভোজী। কোনো কোনো প্রজাতি এমনকি স্বগোত্রীয়ভোজী(cannibal) !

এই পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের শিলাস্তর থেকে প্রস্তরিভুত অবস্থায় ডাইনোসরের ফোসিল বা জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকা থেকেও পাওয়া গেছে ফোসিল। মানে পৃথিবীর সব জায়গায় ডাইনোসর ছিল!

প্লেইস্টোসীন যুগের আগে সব মহাদেশ একসঙ্গে একটিমাত্র ভূখণ্ড ছিল বলে ধারণা করা হয়। তাই সমস্ত পৃথিবী জুরে ডাইনোসরদের এমন ব্যাপক বিস্তৃতি।
মেসোজয়িক মহাযুগের পুরো সময় ধরেই সারা পৃথিবী ছিল তাদের রাজত্বে। Mesozoic এর শেষের দিকে পাখি এবং আদিম স্তন্যপায়ীর আত্বপ্রকাশ ঘটলেও, ডাইনোসরদের প্রবল দাপটে তারা মোটেও প্রাধান্য বিস্তার করতে পারেনি। এই টিকটিকিদের আধিপত্যের কারনে মেসোজয়িক মহাযুগকে বলা হয় Age of reptiles অথবা ডাইনোসরের যুগ।