‘গদ্যে পদ্যে দাঁড়ি কমা’
গণিতে সূত্র, বাংলায় ব্যাকরণ, ইংরেজিতে গ্রামার আর জীবনকে যাপন করতে নিয়ম মানতে হয়। গল্পে বা কবিতায় দাঁড়ি-কমার ব্যবহার ঠিক এই রকম একটা ব্যাপার। আপনি যখন কথা বলেন, আপনাকে দম নিতে হয়, অল্প বা বেশি। আপনি যখন কথা বলেন, আপনাকে দেখে আমরা পরিমাপ করতে পারি আপনার আবেগ, বুঝতে পারি আপনার কথার অর্থ, ধরতে পারি আপনার অভিব্যক্তি। কারণ, আপনি সঠিক যতি চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন মেনে কথা বলেন।
এখন, কথা বলার বদলে যদি আপনি কথা লেখেন? গল্প বা কবিতা? তাহলে যতি চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন প্রয়োগ করতে হবে একই নিয়মে।
বাংলা ভাষায় বা সাহিত্যে যতি বা ছেদ চিহ্ন রয়েছে প্রায় ২০ টি। দাঁড়ি আর কমা এগুলোর মধ্যে সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচাইতে বেশি কাজে লাগে এই দুটি চিহ্ন।
দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ(।) বসে একটা পূর্ণাঙ্গ বাক্যের শেষে। যেমনঃ আমি বই পড়তে ভালোবাসি।
দাঁড়ি দিয়ে আমরা প্রকাশ করি এক সেকেন্ডের সমান বিরতি। ‘বাংলাদেশ’ বলতে এক সেকেন্ড সময় লাগে।
কমা বা পাদচ্ছেদ(,) বসে-
১) একটি পূর্ণাঙ্গ বড় বাক্যের অর্থ সহজ এবং স্পষ্ট করতে। যেমনঃ যদি ভালো করে পড়, ভালো রেজাল্ট করবে।
২) বাক্যে কাউকে সম্বোধনের পর। যেমনঃ অপ্রতিম, চল স্কুলে যাই।
৩) পরস্পর সম্পর্ক আছে, এমন শব্দ পাশাপাশি বসলে। যেমনঃ বন্যা, খরা, মঙ্গা, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
৪) জটিল বাক্যের মধ্যকার প্রতিটি আংশিক বাক্যের পর। যেমনঃ যিনি অপ্রতিমের প্রিয় শিক্ষক, তিনি আমার বন্ধু।
৫) উদ্ধৃতি চিহ্নের আগে। যেমনঃ অপ্রতিম বললো, ‘আমি আইসক্রীম খাব।’
৬) তারিখ লিখতে গিয়ে তারিখ ও বারের পর। যেমনঃ ২৬ আগস্ট, সোমবার, ২০১৯ সাল।
৭) বাড়ি বা রাস্তার নম্বরের পর। যেমনঃ ৫০, রিং রোড, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
৮) নাম ও ডিগ্রিসূচক পরিচয়ের প্রত্যেকটির পর। যেমনঃ অপ্রতিম হোসেন, এম. কম, পি.এইচ.ডি।
কমা দিয়ে আমরা প্রকাশ করি এক সেকেন্ডের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ বিরতি। ‘এক’ বলতে এই পরিমাণ সময় লাগে।
এখন, আমরা গদ্য বা পদ্যে দাঁড়ি এবং কমা কীভাবে ব্যবহার করব? আমরা যতটুকু জানলাম, ততটুকু ধ্রুব সত্য মেনে সাহিত্যচর্চা করব। এই চর্চা হবে স্বতন্ত্র। বাক্যের বা বক্তব্যের অর্থ ঠিক রেখে একজন যেখানে কমা দিয়েছেন, অন্যজন সেখানে দাঁড়ি দিতে পারেন, অবশ্য এই স্বাধীনতা থাকবে কেবল বাক্যের ভিতরের অংশের জন্য।
আমরা খুব সহজ সরল করে গল্প বা কবিতা বা ছড়া লিখব। আমাদের বক্তব্য যেমন হবে, দাঁড়ি আর কমার ব্যবহারও তেমন হবে। আমরা বাক্য গঠন করতে জানলে, দাঁড়ি-কমার প্রয়োগও বুঝব।
আমরা গদ্যের বা গল্পের একটা প্যারায় একটা বিষয় বা একাধিক বিষয়ের বর্ণনা দেব। সেই বর্ণনায় আমাদের প্রকাশ আর আবেগ অনুযায়ী আমরা দাঁড়ি বা কমা বসাব। শান্তভাবে একাধিক কথা বললে, কমাবহুল একেকটা বাক্য হবে। অস্থিরভাবে একাধিক কথা বললে দাঁড়িবহুল একেকটা বাক্য হবে। ব্যাপারটা একেবারেই ব্যক্তিগত। আমরা যেভাবে বলতে চাই, সেভাবেই বলতে পারব।
আমরা পদ্যের বা কবিতার বা ছড়ার একেকটা স্তবকে একেকটা প্রসঙ্গ তুলে ধরব। প্রাসঙ্গিক কথার সঙ্গে সম্পর্ক রেখে দাঁড়ি বা কমা বসাব। হতে পারে দুই চরণ পরপর কমা, তিন চরণ পরপর দাঁড়ি। বিষয়টা একেবারেই আপেক্ষিক। একজনের যতিচিহ্ন, আরেকজনের যতিচিহ্নের সঙ্গে নাও মিলতে পারে।
আমার গল্প ও কবিতার কয়েকটি ছবি সংযুক্ত করলাম-