“Look up at the stars and not down at your feet. Try to make sense of what you see, and wonder about what makes the universe exist. Be curious”. কৌতুহলী হও। প্রশ্ন করতে ভুলে যেও না কখনো! মহাবিশ্বের অসীম পরিধিতে আমাদের পৃথিবী একটি ধূলিকণা মাত্র, কৌতূহলের জিগীষা এতো অল্পতে থেমে গেলে চলবে?
জীবন যখন বাস্তবতার চাপে মাথা নুইয়ে দিবে, হিসেব-নিকেশের সংকীর্ণতায় মনটাকে বেঁধে ফেলতে চাইবে, একবার আকাশটার দিকে চোখ তুলে তাকাতে যেন ভুলে না যাই আমরা। আকাশের ঐ অসীমতায় রয়েছে অনেক প্রশ্নের উত্তর – মহাবিশ্বের জানা অজানা বিষয় নিয়ে অসীম কৌতুহলী এই উক্তিটির প্রবক্তা বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী স্টিভেন উইলিয়াম হকিং । তিনি ছিলেন একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ, মহাবিশ্ববিদ, লেখক, বিজ্ঞান জনপ্রিয়কারী, কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক মহাকাশবিদ্যা বিভাগের পরিচালক, এবং প্রফেসর । জীবনের বেশির ভাগ সময় মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত হয়ে হুইলচেয়ারে কাটিয়েছেন, তীব্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়েছেন। তবুও থেমে থাকেন নি। তার নিরন্তর গবেষণায় আমরা জানতে পেরেছি বিজ্ঞানের চমকপদ আবিষ্কার সম্পর্কে।
আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনাকারী গালিলিও গ্যালিলিই এর মৃত্যুর ঠিক তিনশত বছর পরে, ১৯৪২ সালের ৮ই জানুয়ারি স্টিভেন হকিংয়ের জন্ম হয় অক্সফোর্ডে। তার বাবা ড. ফ্রাঙ্ক হকিং একজন জীববিজ্ঞান গবেষক ও মা ইসোবেল হকিং ছিলেন একজন রাজনৈতিক কর্মী।
স্কুলে “আইনস্টাইন” নামে পরিচিত হকিং প্রথম শিক্ষাজীবন শুরু করেন লন্ডনের হাইগেটের বাইরন হাউজ স্কুলে । এরপর হকিং হার্টফোর্ডশায়ারের র্যা ডলেট গ্রামের স্বাধীন স্কুল, র্যা ডলেট স্কুলে, এক বছর পড়াশুনা করেন, এবং ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে হার্টফোর্ডশায়ারের সেন্ট অ্যালবান্সের অপর একটি স্বাধীন স্কুল, সেন্ট অ্যালবান্স স্কুলে, পড়াশুনা করেন।পরবর্তীতে হকিং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভর্তি হন এবং পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয় নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন।। বিজ্ঞানে তার সহজাত আগ্রহ ছিল। সে সময়ে তাঁর আগ্রহের বিষয় ছিল তাপগতিবিদ্যা, আপেক্ষিকতা এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যা।
কর্মজীবনে হকিং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর থিওরেটিক্যাল কসমোলজির গবেষণা প্রধান ছিলেন। তিনি ১৯৭৯ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুকাসীয় অধ্যাপক ছিলেন এবং ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর এই পদ থেকে অবসর নেন।এছাড়াও তিনি কেমব্রিজের গনভিল ও কেইয়ুস কলেজের ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন।তিনি রয়্যাল সোসাইটি অব আর্টসের সম্মানীয় ফেলো এবং পন্টিফিক্যাল একাডেমি অব সায়েন্সের আজীবন সদস্য ছিলেন।
পদার্থবিজ্ঞানে হকিংয়ের দুইটি অবদান সর্বত্র স্বীকৃত। প্রথম জীবনে সতীর্থ রজার পেনরোজের সঙ্গে মিলে সাধারণ আপেক্ষিকতায় সিংগুলারিটি সংক্রান্ত তত্ত্ব। হকিং প্রথম অনিশ্চয়তার তত্ত্ব কৃষ্ণ বিবর-এর ঘটনা দিগন্তে প্রয়োগ করে দেখান যে কৃষ্ণ বিবর থেকে বিকিরিত হচ্ছে কণা প্রবাহ। এই বিকরণ এখন হকিং বিকিরণ নামে অভিহিত।এছাড়া তার লিখিত বই সমূহ নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে। ‘A Brief History of Time’, ‘Black Holes and Baby Universes and Other Essay’, ‘My Brief History’, ‘The Universe in a Nutshell’ উল্লেখযোগ্য বই।
২০০৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম খেতাবে ভূষিত হন। ২০০২ সালে বিবিসির “সেরা ১০০ ব্রিটন্স” জরিপে তিনি ২৫তম স্থান অধিকার করেন। তাঁর নিজের তত্ত্ব ও বিশ্বতত্ত্ব নিয়ে রচিত বই ‘A Brief History of Time’ দিয়ে তিনি বাণিজ্যিক সফলতা লাভ করেছেন। এছাড়াও তিনি এডামস পুরস্কার, এডিংটন পদক, ম্যাক্সোয়েল পদক, গাণিতিক পদার্থবিদ্যায় ড্যানি হাইনম্যান পুরস্কার , হিউ পদক, আলবার্ট আইন্সটাইন পদক ও আরো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।
স্টিফেন হকিং প্রতিভা দিয়ে জয় করেন বিজ্ঞান। অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী এই বিজ্ঞানী ২০১৮ সালের ১৪ই মার্চ কেমব্রিজে তাঁর বাড়িতে মারা ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবিতে আইজাক নিউটনের সমাধির পাশে ও চার্লস ডারউইনের সমাধি সংলগ্ন অংশে সমাধিস্থ হয়।