১৪০০ বছর ধরে সেপলকার চার্চ রক্ষণাবেক্ষণে কেন মুসলিম পরিবার ?

পুরনো জেরুজালেম শহরের প্রাচীরের বাইরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত জায়গাটির নাম গলগাথা। নিউ টেস্টামেন্ট অনুসারে, এখানেই যীশুখ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়। জায়গাটির অদূরে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। পরবর্তীতে যীশুর ক্রুশবিদ্ধ ও সমাধিস্থ করার স্থানকে ঘিরে গড়ে ওঠে খ্রিস্টানদের সবচেয়ে প্রাচীন উপাসনালয় সেপলকার চার্চ

সেপলকার খ্রিস্টানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থনাস্থল, কিন্তু এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেন দুটি মুসলিম পরিবার। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, এমন রীতির কারণ কী। কারণটা জানতে হলে ফিরে তাকাতে হবে ইতিহাসে। ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে হযরত উমার (রা.) যখন বাইজেন্টাইনদের পরাজিত করে জেরুজালেম অধিকার করেন, তখন জেরুজালেমের আর্চবিশপ সাফ্রোনিয়াসকে এই নিশ্চয়তা দেন যে, খ্রিস্টানদের প্রার্থনাকেন্দ্র সংরক্ষিত হবে। এই উদ্দ্যেশ্যে তিনি মদীনা থেকে আগত প্যালেস্টাইনের নুসাইবাহ পরিবারকে চার্চের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করেন। এরপর ১১৮৭ খ্রিস্টাব্দে সালাউদ্দীন আইয়ুবী ক্রুসেডারদের পরাজিত করে জেরুজালেম জয় করেন। তখন একাধিক খ্রিস্টান দলের মধ্যে বিরোধ এড়াতে তিনি সেপলকার এর  চাবি সংরক্ষণের দায়িত্ব দেন মুসলিমদের। আইয়ুবীও এক্ষেত্রে বেছে নেন নুসাইবাহ পরিবারকে।

তারপর ষোড়শ শতাব্দীতে জেরুজালেম চলে যায় অটোমান সাম্রাজ্যের হাতে। অটোমান সম্রাট সুলতান সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট সেপলকার এর ডানদিকের দরজা বন্ধ করে দেন এবং চাবির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেন দুটি মুসলিম পরিবারকে- নুসাইবাহ এবং জোদেহ। নুসাইবাহরা তো আগে থেকেই এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন, সুলতান সুলেমান জোদেহ পরিবারকেও সেই দায়িত্বের অংশীদার করে দেন। প্রতিদিন সকালে ভাবগাম্ভীর্যের সাথে মুসলিম চাবিরক্ষী চাবি দিয়ে চার্চের দরজা খুলে দেন এবং সন্ধ্যায় দর্শনার্থী এবং প্রার্থনাকারীরা চলে গেলে চাবি নিয়ে বাসায় ফিরে আসেন। বর্তমানে আদিব জোদেহ, জোদেহ পরিবারের পক্ষ থেকে চাবিরক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। নুসাইবাহ পরিবারের পক্ষ থেকে এ দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন ওয়াজিহ নুসাইবাহ। এভাবেই নিরপেক্ষভাবে চার্চের চাবি রক্ষণাবেক্ষণের ফলে যেমন মুসলমানদের নিষ্ঠা ও আমানতদারীতার প্রকাশ ঘটে, তেমনি সম্প্রীতি বজায় থাকে সেপলক্যারের অংশীদার খ্রিস্টানদের ছয়টি দলের। আপনি যদি সেপলকার ভ্রমণে যান, মোমবাতি হাতে বিভিন্ন দলের অসংখ্য প্রার্থনাকারীকে দেখতে পাবেন। দেখতে একই মনে হলেও তাদের প্রার্থনার রীতি, শ্লোক সবই আলাদা। তারপরও বৃহৎ এই উপাসনালয়ে নানা দলের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সত্যিই বিস্ময়কর।

img যীশুখ্রিস্টের সমাধিসৌধ
img আদিব জোদেহ, জোদেহ পরিবারের পক্ষ থেকে চাবিরক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন