সিংগেল মাদার – জীবন ও বেচে থাকাঃ  স্বর্না জানালা ধরে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় পনের মিনিট। তার ছেলে আদিলের বয়স ১০বছর। আদিল বন্ধু দের সাথে ফুটবল খেলতে গেছে। যাবার সময় ছোট খাট ধাক্কা দিয়ে গেছে স্বর্না কে। তেমন কিছু ছিল না।
আদিল বলছিল, “মা, আমি ট্যাব কিনব।” উত্তরে স্বর্না বলেছিল, ” বাবা, তুমি ১২হবে,তখন নিসচই পাবে।” আদিলের উত্তর টা ছিল,”আজকে বাবা থাকলে আমি বাবাকেই বলতাম,তোমাকে বলে ত লাভ নেই আসলে!” বলে আদিল চলে গেল বাইরব ফুটবল খেলতে। স্বর্না র সব রকম অনুভূতি এক সাথে পেয়ে বসল। রাগ,কষ্ট, ভয়! আদিলের তার বাবাকে তেমন মনে নেই।
আদিল যখন পাচ, তখন তাদের ডিভোর্স হয়। ডিভোর্স এর কারন খুব কমন এবং সাধারন। পরকিয়া এবং এর জের ধরে মারধর, মানসিক অত্যাচার। তার পর দুই তিন টা বছর স্বর্না অমানবিক কষ্ট করেছে।
নিজের এফ কমার্সের বিজনেস টা কে সামলানো, ধৈর্য ধরে সামাজিক অত্যাচার (!) গুলো সামলানো, অর্থনৈতিক অবস্থার টানা পোড়েন, আদিল কে অই ছোট থেকে একা বড় করা। সব চেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে মার বাড়িতে। প্রথম দিকে খুটি ছিল না তার- মায়ের বাড়ি ভরসা। তার চলে আসায় দুই তিন দিন খুব আদর থাকলেও হুট করেই পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। মা কথায় কথায় বিরক্ত হন। বাবা খুব একটা কথাই বলেন না।। যে বোন গুলো কে আদরে বড় করেছে -তারাই কথা শুনিয়ে যায়। কোন দাওয়াত পড়লে ত কথাই নাই- এই বিষয় ছাড়া কেউ কোন কথাই বলেনা। বন্ধুরাও এখন আর ফোন ধরেনা, ছেলে বন্ধু গুলো সিম্প্যথি তে অন্য সুর ধরে। আশে পাশের সব কেমন দ্রুত বদলে যেতে থাকে।। স্বর্না ত কারু কাছে টাকা পয়সা খুজেনি, তাহলে? এ বিষয় নিয়ে কথা ছাড়াও কত কথা আছে, সে ত গান জানে, পড়তে ভালবাসে- কই সেসব নিয়ে কেউ কেন কথা বলেনা?. স্বর্না দুই বছর মন খারাপ করে থাকত,ছেলে কে বকাবকি করত,ছেলে কাছে আসতেও ভয় পেত।

এরপর হুট করেই এক দিন তার মনে হল- করুন বা ঘৃনা কোন টাই তার দরকার নেই।।কাউকেই দরকার নেই। সিংগেল মাদার হিসাবে সে একাই নিজেকে সামলাবে। স্বর্না খুব ছোট একটা বাসা ভাড়া করল। তার খালা র বাসা, যেটা খালি পড়ে ছিল। তাও সে আলাদা থাকবে। আদিল কে নিয়েই দৌড় ঝাপ করত। আদিল রাস্তায় ঘুমিয়ে যেত, এক সময় আদিলও অভ্যস্ত হল। দিন গুলো যখন ঠিক হয়ে আসতে লাগল,তখন শুরু হলো – বাবা মায়ের দিকের মানুষের নতুন যন্ত্রনা। সিংগেল মাদার হিসাবে জীবন নাকি একা চলেনা। তাও আবার এই ৩৩ বছরে নাকি জীবন সঙ্গী ছাড়া চলেনা। যেখানেই যায়-একই কথা! স্বর্না কতক্ষন বাসায় বসে থাকবে, কতই বা সবাইকে এভয়েড করবে। বয়স্ক থেকে তার বয়সী -সবাই একই কথা। এগুলো শুরু হলো আদিলের সামনেই। আদিল শুনে শুনে ইদানীং বাবা বাবা করা শুরু করেছে। যে মানুষ টার কোন খোজ নেই, আরেকটি সংসার পেতে দিব্যি সুখে আছে- তার কথা ছেলের মুখে শুনে স্বর্না র বুক কাপে। এই টুকুন ছেলে কে সে কি ই বা বোঝাবে? নিজের উপর রাগ হয় তার, কান্নাও পায়। একেক টা ইদ,একেকটা বিশেষ দিন- তার কাছে বিষের মত! স্বর্না রুপকথার রাজকন্যা নয়- সে সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের মতই শ্বাস নিতে চায় সে!

উপরের এই গল্পের মত আমাদের আশে পাশে আমরা অনেক সিংগেল মাদার কে দেখি!

সিংগেল মাদার রা যে ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হন 

অর্থনৈতিক টানপোড়ন

খুব স্বাভাবিক। এক হাতে বাচ্চা কে সামলানো,তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়া।
পরামর্শঃ ধৈর্য্য হারাবেন না। মনে রাখবেন ভাল অবস্থা আসতে সময় লাগে। কষ্ট হলেও কাজ চালিয়ে যান।

সামাজিক ভাবে হেয় হওয়া

এ ব্যাপার টায় একেবারেই পাত্তা দেবেন না।
মনে রাখবেন, যারা কথা বলে-তারা আপনার ভাল বা মন্দ দুই সময়েই বলবে।
পাত্তা না দিলেই ভাল থাকবেন।
মন খারাপ হলে ভাবুন,এরা আসলে আপনার জীবনে খুব জরুরি কি না।

একক সিদ্ধান্ত

এটি অবশ্যই অনেক পজেটিভলি নেবেন।
প্যারেন্টিং অনেক কঠিন বিশেষ করে যখন আপনি একা কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
তবে এখানে পজেটিভ দিক হল, আপনার সিদ্ধান্ত ভাল বা খারাপ যাই হোক, সেটি আপনার নিজের।
কারু সাথে দ্বন্দ্ব লাগবার সুযোগ নেই।

ক্লান্তি: মানসিক,শারীরিক, ইমোশনালি

দেখুন, এত কথা,এত খোচার মধ্যে ও আপনি দুই একজন কে পাবেন যারা আপনার কস্ট বোঝে।
তাদের সাথেই সময় দিন। পুরোনো বন্ধু – বান্ধবী, ছোট বা বড় কোন কাজিন যে কেউ।
আপনাকে বোঝে। মাসে এক বার হলেও বেড়িয়ে আসুন তাদের সাথে।

নিজের জন্য একান্ত সময়ঃ

যা আপনার ভাল লাগে- বই পড়তে, বেড়াতে যেতে,গান করতে, গাছ লাগাতে, ঘুরতে, সিনেমা য় যেতে- নিজেকে সময় দিন।
তাহলে আর যাই হোক ক্লান্তি আপনাকে পেয়ে বসবে না।

সিংগেল মাদার হিসাবে যা করবেন না

-কখনও ই বাচ্চাকে এর জন্য ব্লেইম দেবেন না।
– অনেক অনেক আদর করুন।
– আপনাকে কষ্ট দিলে তখন রিএক্ট না করে তাকে তার পছন্দের যায়গায় নিয়ে বুঝিয়ে বলুন। যাই বুঝে, আপনি অন্তত চেস্টা করুন।
– নিজেকে ক্লান্ত হতে দেবেন না।
– নিজেকে দোষারোপ করবেন না।
– নিজের প্রতি যত্ন নেবেন।
– নিজের জন্যই বাচুন।