তাজউদ্দীন আহমেদ, স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার পিছনে যে পর্দার আড়ালের সেনাপতির ভুমিকা পালন করেছে । সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করেও দেশকে এনে দিয়েছেন স্বাধীনতা, স্বীকৃতি ।
তার জীবনী নিয়ে লেখা বই সাক্ষী ছিলো শিরোস্ত্রাণ । এই বই নিয়েই আমার আজকের রিভিউ রাইটিং ।
বইঃ সাক্ষী ছিলো শিরোস্ত্রাণ
লেখকঃ সুহান রিজওয়ান
পাবলিশঃ জানুয়ারী ২০১৫
পৃষ্ঠা: ৪৪০
এই কাহিনী একটি যুদ্ধের। সেই যুদ্ধের দেয়ালে নানা চলকের লুকোচুরি, দেশপ্রেমের ঢেউ আর বিশ্বাসঘাতকতার চোরাস্রোত, দাবার বোর্ডের গুটি হয়ে বহু মানুষের হাঁটাচলা।
এই কাহিনী একটি যুদ্ধোত্তর দেশের। সেখানে বহুমাত্রিক সব জটিল গণিত, আলোকের যত অনন্তধারার সঙ্গী দুর্ভাগ্যের অন্ধকার।
‘সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রাণ’ এই দুই সর্পিল সময়ের পটে দাঁড়ানো একজন সরল মানুষের গল্প। (বই থেকে নেয়া) ।
‘সাক্ষী ছিল শিরস্ত্রাণ’ ইতিহাস নয়, উপন্যাস, মূলত তাজউদ্দীন আহমেদের জীবনী। উপন্যাসটি সাজানো দুটি খণ্ডে। প্রথমটি পূর্ব খণ্ড, একাত্তরের ২৫শে মার্চ, অপারেশন সার্চলাইটের গল্প থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় ডিসেম্বরে,দেশ স্বাধীনকালীন সময়ে। দ্বিতীয়টিকে বলা হয়েছে উত্তর খণ্ড, ১৯৭২ থেকে যার সমাপ্তি ১৯৭৫এর নভেম্বরে, জেলহত্যা দিবসে।
এই ২৫ মার্চ ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত যে তাজউদ্দীন আহমেদ, সেই একাত্তরের সেনাপতি আর বাংলাদেশের ইতিহাস প্রায় সমান্তরাল। সার্বভৌম, প্রগতিশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন যারা দেখেছিলেন আর সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য নিঃস্বার্থভাবে যারা নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন তিনি তাঁদের অন্যতম একজন।
তাজউদ্দীন আহমদকে জানা জরুরি এজন্যেই।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা যতগুলো বই আমি পড়েছি, তার বেশীরভাগই ছিলো সম্মুখ যুদ্ধের । কিন্তু এর পেছনে রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতির যে জটিল দাবা খেলা চলছিলো সেই প্রসঙ্গে লেখা খুবই সীমিত । সেই সীমিত কিছু বই এর একটি “সাক্ষী ছিলো শিরোস্ত্রাণ” ।
হ্যা তাজউদ্দিন সাহেবের কথা বলছি, আরবী ভাষায় তাজ- যার অর্থ দাঁড়ায় মুকুট/ শিরোস্ত্রাণ ।
যে কয়জন অবিসংবাদিত নেতাকে আমি মন থেকে শ্রদ্ধা করি, তাদের একজন তাজউদ্দিন আহমেদ ।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যখন আমাদের রাজা শত্রু পক্ষের হাতে বন্দী, তখন এই বিচক্ষণ সেনাপতি লড়ে গিয়েছেন সারা পৃথিবীর সাথে । তার বুদ্ধিদীপ্ত দাবার চালে একে একে পরাস্ত হয়েছিলো রথী মহারথী রা । স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিলো বাংলাদেশকে ।
কিন্তু বরাবরই তিনি ছিলেন অবহেলিত । আসলে আমার কাছে মনে হয়েছে, বঙ্গবন্ধু নামক বিশাল পাহাড়ের পিছনে ঢাকা পড়ে গিয়েছিলেন তিনি । তার অবদান স্বাধীনতা যুদ্ধের মোড় ঘুড়িয়ে দিচ্ছিল । মুক্তিযোদ্ধারা যখন যুদ্ধের মাঠে প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছে, বাধ্য করছিলো পাকিস্তানীদের পিছনে হটতে, ঠিক তখনই রাজনীতি আর কূটনীতির মার প্যাঁচে তিনি জড়িয়ে ফেলছিলেন পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী দের ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ওনার নেয়া প্রতিটা পদক্ষেপ ছিলো অসাধারণ ।
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিদেশীদের দেয়া প্রায় অধিকাংশ সাহায্যের পেছনে ছিলো তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ।
যুদ্ধ পরবর্তীতে যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হতে যে কি পরিমাণ দুঃসাহসী হতে হয়, তা তাজউদ্দিন আহমেদ কে না দেখলে বুঝা যাবে না ।
পরিশেষে শুধুই একটি কথা বলবো, গ্রীকদের ছিলো হেডিস, প্রমিথিউস- আমাদের আছে শেখ মুজিব, তাজ উদ্দিন ।
বাংলাদেশি হিসেবে সবারই উচিত এই বইটি পড়া, বাংলাদেশের জন্ম জানা তো উচিত, কি বলেন ?
You must be logged in to post a comment.