A Dolls house লেখার কারন, প্রতিপাদ্য কিছু বিষয় বা কথা :

এই নাটকটি লেখা বা লেখার চিন্তা শুরু হয় মূলত ১৮৭৮ সালের ৭ই ডিসেম্বরে। কিন্তু লেখা হয়নি just লেখার চিন্তা করেন ইবসেন, যা ইবসেন তার প্রকাশক হেগেলকে রোম থেকে চিঠির মাধ্যমে জানান যে তিনি নতুন একটি নাটক নিয়ে ভাবছেন। এই নাটকে ইবসেন হাত দেন চিন্তা ভাবনার ৮ মাস পরে। এই ৮ মাস উনি শুধু নাটক এবং এর চরিত্র গুলা নিয়েই ভাবছিলেন।

পুরুষশাসিত সমাজে নারীর অবস্থান কোথায়, নারীর প্রয়োজন কতটুকু, সমাজে একজন নারীর – মা, স্ত্রী এবং বোনের ভুমিকা ছাড়াও অন্য কোনো ভূমিকা আছে কি না, সমাজের মুক্তি বলতে শুধু কি পুরুষের মুক্তি, নারীর কোনো মুক্তি আছে কি না, লাস্ট কথা হলো যে আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় নারী পুরুষের যে নিরপেক্ষ জায়গা রয়েছে তা আসলেই নিরপেক্ষ কি না, বা আদৌ আছে কি না, থাকা উচিত কি না,,,,, এই প্রশ্ন গুলোই প্রবল আকার ধারন করেছে ইবসেনের লেখায়। যেসব প্রশ্নের শুরু হয়েছিল উনার লেখা The league of modern life নাটক থেকে। A Dolls House নাটকে আমরা যেসব সমস্যা দেখতে পাই যা নাটকের প্রধান চরিত্র নোরার মাধ্যমে দেখানো হয়েছে, মুলত এই সমস্যার সৃষ্টি হয় The league of modern life নাটকের প্রধান চরিত্র সেলমাকে দিয়ে, কিন্তু সেখানে কোনো রকম সমাধান দেওয়া হয়নি । তারপর ইবসেন রচনা করেন Pillars of society, এইখানেও সেইম সমস্যা দেখানো হয়েছে লোনা হেসেলকে দিয়ে । সমাজে একজন নারীর জায়গা, তার ভুমিকা, নিজের পরিচয় কি, সমাজ নারীদেরকে কেমন চোখে দেখে, নারীকে নিয়ে পুরুষের ভাবনা চিন্তা কেমন, এই সব সমস্যার শুরু হয় The league of modern life এ এবং সব কিছুর উত্তর ও সমাধান দেওয়া হয় ইবসেনের আধুনিক নাটক A Dolls house এ।

এই নাটকটি ৩ টি অংকে রচিত হয়েছে। যার প্রথম অংক কমপ্লিট করতে ইবসেনের ৩ সপ্তাহ লেগেছিল। দ্বিতীয় অংক কমপ্লিট করতে আরো ৬ সপ্তাহ, তার পর কিছু সময় বিরতি নিলেন । ১৮৭৯ সালের ১৮ ই জুলাই ইবসেন আবার লেখা শুরু করেন, শেষ করলেন তেসরা আগস্ট।

A Dolls house নাটকের নামকরনের সার্থকতা :
নাম দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে এইখানে সেসব কিছুই উঠে এসেছে যেখানে কোনো স্বাধীনতা নেই, নিজের ইচ্চার গুরুত্ব নেই, একদম প্রানহীন কিছু মানুষের কথা। পুতুল বলতে এইখানে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যাদের প্রান থাকা স্বত্তেও প্রানহীন, মুখ থেকেও বোবা, নিজের ইচ্ছা, ভাল খারাপ নিয়ে বলতে পারেনা, চিন্তা করার জন্য জ্ঞান থাকার পরেও অন্য কারো কথায় চলে বা চলতে হয়, নিজেকে প্রকাশ করতে পারেনা, সমাজে নিজের জায়গা টা কি বুঝতে পারেনা, বুঝাতেও পারেনা, অলওয়েজ তাই করতে বাধ্য যা অন্য কেউ করতে বলে। যেমন পুতুল নিজে নিজে কিছু করতে পারেনা, অন্য কেউ তাকে পরিচালনা করে, একটা পুতুল ঠিক তাই করে যা তার পরিচালক করতে চায় বা পরিচালক যেমন করাতে চায়। এইখানে নিজের কিছু একেবারে মুল্যহীন । এইখানে পুতুল হিসেবে নোরাকে দেখানো হলেও মুলত নোরার মত সব নারীকে বোঝানো হয়েছে, তাদের অবস্থান দেখানো হয়েছে। এই নাটকে সেটাই ফুটে উঠেছে যা যুগ যুগ ধরে পুরুষশাসিত সমাজ মনে লালন করে আসছে । ইবসেনের লেখায় যেমন নারীর প্রতি অন্যায় গুলো ফুটে উঠেছে সাথে সাথে এই সব কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদি রুপ টাও দেখিয়ে দিয়েছেন। উনার লেখায় যেমন পুরুষশাসিত সমাজের প্রতি ধিক্কার দেওয়া হয়েছে তেমনি নারীদেরকে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তাদের যথাযথ জায়গা, তাদের কাজ, সমাজে তাদের ভূমিকা। সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীর ও যে নির্দিষ্ট একটা জায়গা আছে, প্রয়োজন আছে সেটাই উনি উনার লেখায় তুলে ধরেছেন। শুধু যে পুরুষশাসিত সমাজের প্রতি বিরুপ ভাব দেখানো হয়েছে তা নয়, নারীদের ত্রুটি গুলাও দেখানো হয়েছে। নারী পুরুষ চিহ্নিত করার আগে আমরা সবাই মানুষ আর মানুষ হিসেবে সমাজে আমাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা স্থান আছে। যেখানে সবার নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে তাহলে কেন নিজের অস্তিত্ব ছেড়ে অন্য কারো অধীনস্থ হয়ে থাকতে হবে? কেউ ণারী বা পুরুষ যাই হোক সব কিছুর আগে সে একজন মানুষ এবং তার নিজের স্থান আছে। মানুষ হিসেবে তাকে তার জায়গাটা খুজে নিতে হবে, নিজেকে আবিষ্কার করতে হবে। শেক্সপীয়রের Richard | | যেমন শুধু রাজার স্বর্গীয় দায়িত্ব নিয়ে রচিত হয়নি, An Enemy of the people এর মুল কথা যেমন শুধুই জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত ছিল না, তেমনি A Dolls House এর মুল সমস্যা শুধু নারীর অধিকার স্বীকৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই সমস্যা সমাজের সব মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে । সমাজে নারীদের যে অবস্থা তা থেকে মুক্তি নয় বরং একজন মানুষ হিসেবে আত্নার মুক্তির কথাই বলা হয়েছে। আর এই আত্নার মুক্তি মানুষের বাহির থেকে নয়, ভেতর থেকেই আসে। প্রতিটি মানুষের বুঝা উচিত যে সে আসলে কে, কি করতে পারে, সে যেমন তেমন হওয়া বা হওয়ার চেষ্টা করা। আমি যেমন তেমন হওয়ার চেষ্টা করলে বা হতে পারলেই মুক্তি আসবে। যখন কেউ নিজেকে আবিষ্কার করতে পারে, বুঝতে পারে ঠিক তখনি আসে প্রকৃত মুক্তি।

নাটকটির প্রকাশকাল : ১৮৭৯ সালের ৪ ডিসেম্বর,
কোপেনহেগেনে।
চরিত্র : নাটকটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়
মুলত ৫ টি চরিত্রকে ভিত্তি করে।

প্রধান চরিত্র : নোরা
তরওয়াল্ড হেলমার : নোরার স্বামী
ড. র‍্যাংক : হেলমারের বন্ধু
নিলস ক্রগসতাদ : হেলমারের অফিসের একজন কর্মকর্তা ।
মিসেস লিনদ : নোরার বান্ধবি
অ্যান : নোরার ছেলেমেয়ের ধাত্রী

স্থান : হেলমারের বাড়ি

লেখক পরিচিতি :

হেনরিক যোহান ইবসেন একজন স্বনামধন্য নরওয়েজীয় নাট্যকার, যিনি আধুনিক বাস্তববাদী নাটকের সূত্রপাত করেছেন। ইবসেনের কর্মের প্রতি সম্মান জানাতে তাকে আধুনিক নাটকের জনক বলা হয়। ইবসেন নরওয়ের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ লেখক এবং গুরুত্বপূর্ণ নাট্যকার হিসেবে পরিচিত। এছাড়া ও ইবসেন নরওয়ের জাতীয় প্রতীক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন।

জন্ম : ২০ মার্চ, ১৮২৮ ( সিয়েন, নরওয়ে)

কর্মজীবন : নাট্যকার, কবি, পরিচালক

মৃত্যু : ২০ মে, ১৯০৬ ( ক্রিস্টিয়ানিয়া, নরওয়ে)

উল্লেখ যোগ্য কর্ম : পিয়ার গিন্ট – ১৮৬৭
অ্যা ডলস হাউজ – ১৮৭৯
গোস্টস – ১৮৮১
দ্য ওয়াইল্ড ডাক – ১৮৮৪
হেড্ডা গ্যাবলার -১৮৯০।