বই পড়া অভ্যাস দারুন একটি বিষয়।  আপনি যদি আপনার পড়ার অভ্যাস বাড়াতে চান তাহলে আপনাকে নিয়মিত কিছু অভ্যাস চর্চা করতে হবে । প্রতিদিন এই বা চর্চার ফলে আপনার পড়ার প্রতি মনোনিবেশটা বাড়বে মনোযোগটা বাড়বে আপনি ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে পড়বেন । কিছুদিন এই অভ্যাসটা চালু রাখলে আপনার বই পড়ার মানসিকতাটা একদম তৈরি হয়ে যাবে । যার ফলে কোন কিছু দেখে পড়ার প্রতি আর অনীহা হবে না। বই পড়ার প্রতি অনীহাটা দূর করতে গেলে সমাধানের কিছু  উপায় আমরা আলোচনা করবো আশা করি আপনি পোষ্টটা ধৈর্য্য সহকারে পড়বেন এবং এটা মনে রেখে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করবেন ।

বই পড়া অভ্যাস কিভাবে তৈরি করবেন

বই পড়া সময় ঠিক করা ঃ

আপনাকে কিছু সময় প্রতিদিন বের করতে হবে বই পড়ার জন্য মিনিমাম হলেও ৫ থেকে ৫ মিনিট সহজ কোন বই দিয়ে শুরু করেন এবং প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট হলেও চেষ্টা করুন এরকম ৫-৭ দিন চেষ্টা করার ফলে আপনার এক সপ্তাহের ভিতরে দেখবেন 10 থেকে 40 মিনিট আপনি বই পড়ার প্রতি মনোযোগ ধরে রাখতে পারছেন এবং আপনি যদি মাত্র কয়েকদিনে নিয়মিত পড়ার চর্চা টা ধরে রাখেন তাহলে এটা আপনার মনের ভিতর একটা ইচ্ছা তৈরী করবে যে না আমি আরেকটু পড়ি এই ইচ্ছাটাই আপনাকে অনেক কাজে দেবে ।  মনে রাখবেন শুরু করার জন্য কিন্তু এটা দারুণ একটা চেষ্টা আমাদেরকে অব্যাহতভাবে আরো কিছু পায় এগিয়ে যেতে হবে । 

তালিকা তৈরিঃ

আপনার পছন্দদের বইয়ের সুন্দর একটি তালিকা করতে পারেন এই তালিকা তৈরি করতে ইন্টারনেট বা আপনার বন্ধু-বান্ধব কিংবা বিভিন্ন বইয়ের রিভিউ সাইট গুলোর সাহায্য নিতে পারেন,  প্রথমে আপনি চেষ্টা করুন যে আপনি কোন ধরনের বইগুলো পড়তে পছন্দ করেন বা কোন লেখকের বই গুলো আপনি খুব পছন্দ করেন ।  সেই অনুযায়ী সেরা বইগুলোর একটা তালিকা নিন আপনার পছন্দের সাথে যায় এমন বইগুলো তালিকার সাথে আপডেট করতে পারেন এই তালিকা ধরে আস্তে আস্তে করে অল্প অল্প করে একটু পড়ার চেষ্টা করুন এতে হবে কি আপনি সাহিত্যের সেরা সৃষ্টি গুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে পড়ার একটা টান অনুভব করবেন যা বই পড়তে অনেকটাই হেল্প করে ।

বই পড়ুয়াদের সাথে যোগাযোগ ঃ 

সমমনা বই পড়ুয়াদের সাথে যোগাযোগ থাকলে আমাদের অনেক দিক দিয়ে সুবিধা কারণ বই পড়ুয়া মানুষরা একসাথে হলে বই নিয়ে কমবেশি আলোচনা করেনই এবং কোন বইটার কিরকম এবং কোন দিক গুলো অনেক আকর্ষণীয় কোনটা ভাল লাগে কোনটা খারাপ লাগে এইগুলো আমরা আলাপ করতে পারি আড্ডা দিতে দিতে। অনেক কিছু শেখা যায় জানা যায় এবং আরেকজনের বইয়ের বই পড়ার পরে যে ফিলিংসটা সেটা যদি সে ব্যক্ত করে আপনার সামনে তাহলে আপনার ভেতরে এক ধরনের আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠবে যেন আমি বইটা পড়ি ।  এটা বই পড়ার অভ্যাস তৈরি ক্ষেত্রে অনেকটা গুরত্বপূর্ণ । গক কয়েক বছর ফেসবুক এ অনেক গ্রুপ তৈরি হয়েছে বইপড়ুয়াদের নিয়ে এই গ্রুপ গুলোতে যোগ দিতে পারেন । আপনার মতামত জানাতে পারেন অন্যের মতামত গুলো ফলো করতে পারেন আমার মনে হয় এটি ইন্টারেস্ট বিল্ডিং করার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি । বই পড়ার অভ্যাস রপ্ত করার জন্য গুরুত্বপুর্ন তেমনি একটা বই পড়ুয়াদের গ্রুপের ঠিকানাঃ https://www.facebook.com/groups/swapybooks/

বই সাথে বহন করাঃ

আপনি যদি বই কে ভালোবেসে ফেলেন পড়া শুরু করতে করতে তো একটা কাজ করতে পারেন আপনি একটা বই ক্যারি করার চেষ্টা করুন  । এই বই থাকতে পারে আপনার ব্যাগে , বা গাড়ীতে বা বিছানার পাশে ।  একটু ফাঁকা সময় পেলে আপনি বইটা বের করে একটু পড়তে পারেন , আপনার ইন্তারেস্ট যদি থাকে বইটা টা শেষ করার তাহলে বইটা ক্যারি করুন একটা সময় আপনি পেয়ে যাবেন কিছু পড়ার।

নিরিবিলি একটি জায়গা বেছে নিনঃ

বই পড়ার জন্য আসলে কোলাহলমুক্ত জায়গা দরকার ।  যেটা হতে পারে আপনার বাসা বা অন্য কোথাও যেখানে আপনি একটু আরামসে বা রিলাক্স মুডে বসে অথবা শুয়ে বই পড়তে পারেন এবং টিভি কিংবা অন্য বিনোদন মাধ্যমের সাউন্ড যাতে ডিস্টার্ব না করে সেদিকে খেয়াল রাখলে ভাল হয়।

টিভি ও ইন্টারনেট ব্যবহার কমানোঃ  

বই পড়ার অভ্যাস করতে বই পড়ার যে সময়টা লাগে, বর্তমানে সে সময় ম্যাক্সিমাম নিয়ে নিচ্ছে ইন্টারনেট এবং টেলিভিশন । আপনি যদি এবার বই পড়ুয়া হয়ে যান তাহলে দেখবেন যে আপনার ইন্টারনেটে সময় কাটানোর চেয়ে আপনি বই পড়তে বেশি ভালোবাসছেন বা টিভি দেখার চেয়ে বেশি ভালবাসছেন ।  এটা একদিন হবে না এটা আস্তে আস্তে হবে আপনি তখন সেটা ইনজয় করবেন আমি এটুকু বলতে পারি । 

বাচ্চাদের বই পড়ার অভ্যাস তৈরিতে সাহায্য করুনঃ

 আপনি যদি সন্তান থাকে, আপনি অবশ্যই তাদের পড়ার ব্যপারে উৎসাহ দেবেন । বাচ্চাদের পড়াশোনার অভ্যাসটি তৈরি হলে যখন তারা বেড়ে হয়ে তখন নিজে থেকেই তারা পাঠক হয়ে উঠবে  .. এবং এটি তাদের জীবনে সফল হতে সাহায্য করবে। শিশুদের উপযোগী বই খুঁজে  তাদের পড়তে দিন , এটা একই সময়ে আপনি নিজের মধ্যে পড়ার অভ্যাস বিকাশ করছেন … এবং আপনার সন্তানের সাথেও দারুন সময় ব্যয় করছেন। আপনি বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, একাডেমিক বই এর পাশাপাশি বাচ্চাদের জন্য এটা দরকারি এটা বিভিন্ন রিসার্স দ্বারা প্রমানিত ।

বই পড়ার অভ্যাস করতে পঠিত বইয়ের একটা তালিকা  ঃ

এটা দরকারি , অনেকটা কি কি পড়বেন সেটা হয়ে যাওয়া একটা তালিকা আরকি, কিছুদিন পর আপনার এটা দেখে নিজেরই ভাল লাগবে, সাথে কিছু কিছু নোট রাখুন এটা অনেক কাজে লাগে, কোন লেখা লিখতে গেলে কোন বই কি সম্পর্কে ছিল  সেটা থেকে অনেক রেফারেন্স নেওয়া যায় ।

কিছু ব্যবহ্রত বা পুরাতন বইয়ের দোকান চিনে রাখুনঃ

ব্যাপার টা একটু ভিন্ন রকম হলেও দারুন কাজের, পুরান বইয়ের দোকানে সিরিয়াস পাঠকদের ও বই সংগ্রাহকদের ভিড় লেগেই থাকে। কারন নতুন বইয়ের দোকানে বেশিরভাগ সময় আপনি আপনার চাহিদা মত বই পাবেন না। পুরান বইয়ের দোকানে মাঝে মাঝে এমন বই পাবেন যা সারা জীবন সংগ্রহ করে রাখতে মন চাইবে । বইয়ের দাম অনেক কম থাকে, চাইলে আপনি বইয়ের বদলে কিছু টাকা দিয়ে নতুন বই নিতে পারেন । https://www.swapybooks.com/2018/09/25/1503/

লাইব্রেরীতে যাতায়াতঃ

আপনি নিয়মিত পাঠক হয়ে গেলে মাঝে মাঝে লাইব্রেরীতে যেতে অভ্যাস হয়ে যাবে। আপনি মাসে কয়েকবার যাবার সময় বের করে নিতে পারেন । ঢাকার লাইব্রেরি গুলির খোজ খবর , বেশ কিছু লাইব্রেরি থেকে বই বাসায় নিয়েও পড়া যায় ।

বিভিন্ন রকমের মজার বই পড়ূনঃ

একটা কথা কি বইয়ের ভুবনে আপনি মুক্ত, তাই মনের আনন্দে বিভিন্ন রকমের ফিকশন বা ননফিকশন বই বেছে নিয়ে পড়ূন, সব সময় সিরিয়াস বই পড়লে একঘেয়েমি পেয়ে বসবে ।  বই পড়ার অভ্যাস হয়ে গেলে আপনি গভীর জ্ঞানের বই গুলি পড়া নিজে থেকেই শুরু করবেন , কিছু বইয়ের নাম রয়েছে এই পোস্ট এ যা  সর্বকালের সেরা ১০ বই যা পাঠক দ্বারা ভোটে নির্বাচিত

ব্লগে লিখতে পারেন ঃ

আপনার বই পড়া অভ্যাস তৈরি হয়ে গেলে এটা নিয়ে কিছু লিখলে কিন্তু দারুন হয়, সে ক্ষেত্রে ব্লগ দারুন যায়গা, ইদানিং ফেসবুক ভিত্তিক অনেক গ্রুপ আছে সেখানে লিখতে পারে বইটি পড়ে আপনার কেমন লেগেছে, দেখেন অনেকেই পজেটিভ ভাবে নিচ্ছে, আপনি বড় একটা নেটওয়ার্ক পেয়ে যাবেন , যা আপনার বই পড়ার অভ্যাসকে আরো এগিয়ে নেবে।

ব্যাস্ততার অজুহাত ঃ

বই পড়ার অভ্যাস রপ্ত করার ক্ষেত্রে এটা করলে আপনি আপনার নিজেকেই ফাকি দেবেন। তাই নানা ব্যস্ততার মাঝে পড়ার সময় বের করুন ।