আঞ্চলিক ভাষার অভিধান
আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের উপভাষার একটি সংকলন গ্রন্থ। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সম্পাদনায় ১৯৬৫ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষাসমূহের সংকলন-জাতীয় গ্রন্থ এটিই প্রথম। বাংলা ভাষার বিভিন্ন আঞ্চলিক রূপ নিয়ে প্রথম গবেষণার পরিচয় পাওয়া যায় গ্রিয়ারসনের ‘The Linguistic Survey of Indianguistic’ (১৯০৩-১৯২৮) নামক গ্রন্থে। এর প্রথম খণ্ডে বাংলাদেশের উপভাষা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের আঞ্চলিক অভিধান রচনার প্রথম প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন এফ.ই পার্জিটার তার ‘Vocabulary of Peculiar Veacular Bengali Words’ (১৯২৩) নামক গ্রন্থের মাধ্যমে। ১৯৫৮ সালের প্রথম দিকে বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে তিন খণ্ডে সমাপ্য একটি অভিধান প্রণয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, উচ্চ বিদ্যালয়, সাময়িক পত্রিকা ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদনপত্র প্রেরণের মাধ্যমে শব্দ সংগ্রহ করা হয়। ঢাকা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, খুলনা, পাবনা, সিলেট, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, রংপুর, যশোর, বাখেরগঞ্জ, বগুড়া, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, নোয়াখালী, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও করাচি অঞ্চল থেকে ৪৫৩ জন সংগ্রাহকের মাধ্যমে মোট ১,৬৬,২৪৬টি আঞ্চলিক শব্দ সংগৃহীত হয়। সংশোধন ও বিচার-বিবেচনার পর এ থেকে প্রায় পঁচাত্তর হাজারের মতো শব্দ সংকলনের জন্য গৃহীত হয়। সাত বছরের প্রচেষ্টায় (১৯৫৮-১৯৬৪) সহস্রাধিক পৃষ্ঠার এ মহাগ্রন্থের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে। ১৯৭৩ সালে এর দ্বিতীয় মুদ্রণ এবং ১৯৯৩ সালে ১,০৫৮ পৃষ্ঠায় এর প্রথম পুনর্মুদ্রণ প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের উপভাষা বিশ্লেষণ প্রধানত ভৌগোলিক এবং প্রচলিত ব্যাকরণের পদ্ধতিতে করা হয়েছে। এ কথা বলা যায় না যে, আধুনিক ভাষাতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে বাংলাদেশের উপভাষাসমূহ শনাক্তকরণ বা বিভিন্ন উপভাষার পূর্ণাঙ্গ ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ হয়েছে। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের একটি উপভাষা মানচিত্র প্রণীত হয়নি, ইতোমধ্যে বাইরের পৃথিবীতে উপভাষাতত্ত্ব আঞ্চলিক ও ভৌগোলিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভাষাতাত্ত্বিক পদ্ধতি অতিক্রম করে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সমাজতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও ভাষার বৈচিত্র্য অনুসন্ধান কেবলমাত্র ভাষাতাত্ত্বিক ভূগোলের মধ্যে সীমিত না রেখে সমাজতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হওয়া উচিত। আর উপভাষার ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে প্রচলিত ব্যাকরণও সাংগঠনিক ভাষাতাত্ত্বিক পদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গে জেনারেটিভ পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।