শেখ সাদী গল্প সমগ্রর শুরুতেই আমি এটা বলব যে গ্রুপের অনেকেই মনে হয় শেখ সাদী সম্পর্কে অনেক কিছুই জানেন। সো আমার মনে হয়না উনাকে নিয়ে তেমন ভাবে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন নেই। তারপর ও উনার সম্পর্কে কিছু না বললেই চলে না। প্রতিটা মানুষের এমন কিছু দিক, গুন বা কিছু কথা থাকে যেগুলো না চাইলেও বলতে হয়।
শেখ সাদী জন্ম নিয়েছিলেন এমন এক দেশে যে দেশ একসময় ইতিহাস – ঐতিহ্যে, শিক্ষা – জ্ঞানে, ধন- দৌলতে সেরা ছিল। এখন ও সেই দেশ উন্নত দেশের কাতারে রয়েছে। বুঝতে পারছেন না কোন দেশের ঈঙ্গিত করা হয়েছে? সেই দেশের নাম হল ” ইরান “।শেখ সাদীর জন্ম হয়েছিল ১১৯৪ সালে ইরানের তৎকালীন রাজধানী সিরাজী নগরে। উনার বাবা ছিলেন তখনকার নামকরা একজন রাজকর্মচারী। ছোট বেলাতেই মা বাবা হারানোর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই উনার পারিবারিক অবস্থায় খারাপ হয়ে যায়। তবে শেখ সাদী ছিলেন অনন্যদের মধ্যে অনন্য। টাকা পয়সা,বাড়ি, গাড়ি, বিলাসিতার ঊর্ধ্বে ছিলেন। এটা ছাড়াও উনার অনেক গুন ছিল যার মধ্যে একটা ছিল জ্ঞানার্জন করার আপ্রান প্রচেষ্টা। মূলত এই জ্ঞানার্জন এর নেশাই উনাকে পার্থিব জীবনের সব রকম ভোগ বিলাশ থেকে দুরে রেখেছিল। উনার জ্ঞানার্জন এর নেশা, কথা,চলাফেরা সবকিছুর জন্যেই উনি ছিলেন সবার প্রিয়। জ্ঞানার্জন এর জন্য উনি তখনকার রাজার দেওয়া অনুগ্রহ ও সম্মান কে গ্রহন করেন নি। অতি সাধারণ এর মত জীবন ধারন করেছেন এবং সবসময় অন্যের ভাল করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। আপনি শুনে হয়ত আশ্চর্য হবেন যে উনি ইরান থেকে পায়ে হেটে ১৫ বার মক্কা গিয়েছিলেন। শেখ সাদী সর্বদা নির্জন এবং নিরিবিলি তে বসে কাব্যচর্চা করতেন এবং জ্ঞান সাধনার জন্যে বিভিন্ন জায়গায় তীর্থ যাত্রা করতেন। অনেকেই উনাকে টাকা পয়সা দিতে চাইতেন কিন্ত উনি কখনো নিজের জন্য কারো কাছ থেকে কিছু নেন নি। বিভিন্ন দেশ ভ্রমনের ফলে অনেক বিচিত্র বিষয়ে তিনি অবিজ্ঞ ছিলেন। বলতে গেলে উনার ছিল অসামান্য পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, জীবন দৃষ্টি, এবং অফুরন্ত মানবপ্রেম। জীবিনের বিচিত্র অভিজ্ঞতাকেই উনি উনার বিভিন্ন কবিতা,গল্পে লিপিবদ্ধ করেছেন। শেখ সাদীর পদ্যে লেখা গল্পের মাঝে যে উপদেশ গুলো আছে তা সবার কাছেই মূল্যবান। শেখ সাদী কাব্য রচনায় বিখ্যাত হয়েছেন ফার্সি ভাষায় লেখা কাব্য দিয়ে। উনার লেখা দুটি কাব্য বিশ্বসাহিত্যে উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় স্থান দখল করে আছে। সেই দুটি কাব্য হল ” গুলিস্তা ও বুস্তা ”
যাদের অর্থ হল “ফুলের বাগান ও সৌরভের উদ্যান। সাদীর উদ্দেশ্য হয়ত ছিল গল্পের ছলে উপদেশ দেওয়া। শেখ সাদীর এই সব গল্প শত শত বছর ধরে পাঠকদের মধ্যে আলোড়ন তৈরি করেছে। সেই সব সুরেলা ছন্দ, ধ্বনি মাধুর্য ও উপদেশবাণীর ঝংকার এই বইয়ে নেই। এই বইয়ে মাত্র কয়েকটা গল্প রয়েছে। শেখ সাদীর লেখা মূল বই না পড়লে এই ছন্দ,ঝংকার বুঝা যাবেনা।
এখন আসি মূল কথায়,
Swapybooks ফেসবুক গ্রুপের একটা প্রতিযোগিতায় উপহার হিসেবে আমি যে বইটি পেয়েছি এটি শেখ সাদীর অজশ্র গল্প গুলোর মধ্যে কিছু গল্প নিয়ে। এইখানে মাত্র ৩৪ টি গল্প আছে তাও অনেক ছোট ছোট কিন্ত এর ভাবার্থ বিশাল। না পড়লে সেই বিশালতা মিস করবেন এটা বলতে পারি, যদিও আমার এত ক্ষমতা নেই যে উনার মত বিখ্যাত ব্যক্তির লেখার সব ভাবার্থ বুঝতে পারবো।
এখন চলেন, এই বইয়ের প্রতিটা গল্পের অন্তর্নিহিত কিছু কথা দেখে নেওয়া যাক। সবকিছু বলা সম্ভব না কিন্তু এই গল্প গুলোর কয়েকটা একই অর্থ বহন করে। আমি শুধু সেটুকুই বলতে পারি যা আমি এই গল্প গুলো পড়ার পর বুঝেছি।
১) উপকারী মিথ্যা– মিথ্যা বলা যদিও পাপ কিন্ত সব সময় সব ক্ষেত্রে পাপ হয়না। আপনার একটা মিথ্যা যদি কারো জীবন বাঁচাতে পারে, কারো জীবিনে নতুন কিছুর যোগ করতে পারে, কাউকে ভাল হওয়ার পথ দেখাতে পারে তাহলে সেই মিথ্যা পাপ নয়।
২) নুনের দাম – আমরা অনেক সময় অন্য কারো জিনিস গায়ের জোরে বা অন্য কিছুর প্রভাব দেখিয়ে হাতিয়ে নেই,বা নিজের করে নিয়ে ফেলি। যা মোটেও ঠিক না। যে জিনিসের জন্য আপনি অন্যের উপর জোর করছেন তার মানে আপনার সেই জিনিসের খুব দরকার আর দরকারি জিনিসের মূল্য ঠিক সময় অনেক বেশি। আপনার ক্ষমতা আছে বলে সেই ক্ষমতা দিয়ে অন্যের জিনিস তার অনুমতি ছাড়া নিতে পারেন না। এইখানে আসলে চরম বাস্তবতার চিত্র ফুটে উঠেছে। যাকে আপনি প্রহরী হিসেবে নিয়োগ করলেন সেই যদি চুরি করে তাহলে যারা চুর তারা অনায়সে সুযোগ পাবে চুরি করার। তাহলে বলুন তো প্রহরী রেখে আপনার লাভের লাভ কি হয়েছে।
৩) ক্ষমা – সবাই জানি আর বলি যে ক্ষমার চেয়ে মহৎ গুন আর হয়না। আসলেই তাই, কিন্ত আমরা কি সেটা মেনে চলি যেমন টা বলি? আপনাকে যদি আমি বাজে কিছু বলি আপনি এক মিনিট ও দেরি করবেন আমাকে সেইম কিছু বলার জন্য। হয়ত এর চেয়ে জঘন্য কিছু বলে দিবেন। যাই হোক বলেই তো দিলেন, এখন বলেন আমার বলা কথা গুলো কত টা ঠিক ছিল, আপনি তো ভাল কিছু দিলেন না আমায়, আপনিও তত টাই নিচে মেনে গেলেন যত টা আমি বলেছি বা তার চেয়েও বেশি। কাউকে তার কথার সাথে সাথে তাকেও অপদস্ত করার মাঝে নিজেকে বড় বা মহৎ মনে করার কিছু নেই।
৪) বিচার নেই : আপনি খেয়াল করলেই এমন অনেক মানুষ দেখতে পারবেন যাদের কাছে তাদের সবকিছুই অনেক মূল্যবান, যত্নের। আচ্ছা আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং মূল্যবান জিনিস টা কি? আপনি কি বিশ্বাস করেন যে একজন মা ও বাবার কাছে পৃথিবীর সব থেকে দামি জিনিস হচ্ছে তাদের সন্তান। আপনার মা বাবা কি টাকার বিনিময়ে আপনাকে বিক্রি করতে পারবে। আমার মনে হয়না এমন মা বাবা আছে বলে। কিন্তু আছে, তা না হলে একটা বাচ্ছা জন্ম নেওয়ার পরেই কেন সেই বাচ্ছারা স্থান মায়ের কোলে না হয়ে হয় রাস্তার পাশে ডাস্টবিনে? যখন একটা বাচ্ছার কথা ছিল মায়ের কোলে মাথা রেখে গভীর আদরে ঘুম পাড়ানোর গান শুনার তখন রাস্তায় থাকা ক্ষুধার্ত কুকুরের ভয়ংকর চিৎকার শুনতে হয়? তাদের ভয়ংকর বিষাক্ত দাতের দ্বারা শরীরের প্রতিটা অংশ জোরে শুরু হয় মরন জ্বালা, এমন অবস্থায় যখন এই সন্তানের বেচে থাকার আর্তনাদ, শরীরের অংশ গুলো ছিড়ে যাওয়ার কষ্টে আকাশ – পাতাল পর্যন্ত কেঁপে উঠে তখন ও এই সন্তানের মা বাবা খুব শান্ত থাকে। অন্যদিকে যাদের কাছে নিজের বাচ্ছার একটু কষ্ট তাদের মাথায় আকাশ ভেংগে পড়ার মত, নিজের জীবনের মূল্য সবচেয়ে বেশি তারাই আবার অন্য কারো জীবন নিয়ে খেলে মৃত্যুর খেলা। তাহলে কি অন্য কারো জীবনের মূল্য নেই? আপনার জীবনের এত মূল্য তাহলে কোথা থেকে আসলো। আপনি একাই অমূল্য কিছু হয়ে গেলেন? কারো আপনার মত টাকা পয়সা, আরাম করার জন্য বিশাল বাড়ি না থাকলেও আপনার কাছে আপনার জীবন যতটা প্রিয় অন্য কারো কুড়ে ঘর হলেও তার কাছে তার জীবনের মূল্য কোনো অংশে কম নয়।
৫) কাজের ফল – এইখানে বলার মত কিছুই নেই, দেখেই বুঝতে পারছেন কি হতে পারে এর অর্থ। যেমন কর্ম, ফল টা ও তেমনি হবে। পরের জন্যে খুয়া করতে গেকে একদিন সেই খুয়ায় আপনি নিজেই পড়ে যাবেন।
৬) চোরে না শোনে ধর্মের কথা – যার ভিতরে জ্ঞান এর ছিটেফোঁটা ও নেই তাকে যতই ঈশারা ঈঙ্গিত করেন, যতই আপনি আংগুল দিয়ে রাস্তা দেখিয়ে দেন কাজ হবেনা। ভাল আর খারাপের মধ্যে পার্থক্য করার মত ক্ষমতা ই তার নেই, সো তাকে ভাল কথা শুনিয়ে কিছুই হবেনা। যেমন টা বলা হয় উলু বলে মুক্তা ছড়ানো। ফাকা মাঠে কথা বললে যা না বললেও তাই।
৭) যেমন ছিলাম – কি বলা যেতে পারে এই গল্পে,,, খুজে বের করা কঠিন,,,,,,, পেয়ে গেছি
প্রেম ভালবাসা তো সবাই ভালই বুঝেন, আমার থেকে বেশি। ক্লাস ত্রি – ফোর এ পড়া ছেলে মেয়েরা ও বুঝে কি ভয়ংকর যুগে আছি সেটা বলার অপেক্ষা থাকেনা। যাই হোক,,, আপনি একজন কে ভালবাসেন, সেও চায়,, তো দুই জনের চাওয়া এক হয়ে প্রেম জমে ঘি হয়ে হয়ে গেল। এখন কথা হল আপনি যাকে ভালবেসে মন দিলেন সে কি তার যোগ্য? আপনি যাকে মন দিলেন সে কালো, বেটে যাই হোক তাতে আমার প্রশ্ন নয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনি যাকে ভালবেসে মালা পড়িয়েছেন সে আসলেই এই মালার যোগ্য কি না,,, আপনার দেওয়া মালার মূল্য সে বুঝে কি না? আপনি বলবেন যে না বুঝে তো মালা পড়াই নি, হ্যা অবশ্যই বুঝে পড়িয়েছেন, তবে কতটা বুজে পড়িয়েছেন? মুক্তার মালার মুল্য সবসময় থাকে কিন্তু সেই মালা সবার গলায় শোভা পায়না। আপনি যে কাউকে সেই মালা পড়াতে পারেন কিন্তু সেই ব্যক্তির যদি এই মালার মূল্য বুঝার ক্ষমতা না থাকে, এই মালার ভার বইতে না পারে তাহলে সব কিছুই মূল্যহীন। ছোট নদীর মাছ যখন সাগরের মত বিশাল জায়গায় পড়ে তখন সে নিজেকে ওই জায়গায় মানিয়ে নিতে পারেনা, যার ফলে আগের সব কিছুতেই আবার যাওয়ার জন্য ছটফট করে, আর যদি আপনার দেওয়া জিনিস ফেলে চলে যায় তখন অপমান আপনার নিজের ই হবে।
৮) সত্যিকার পালোয়ান – গায়ের জোর দিয়ে আপনি কখনো সব কিছু আদায় করতে পারবেন না। পৃথিবীতে যা কিছু অমূল্য, অনন্য সব কিছুই ভালবাসা, কষ্ট, সহনশীলতা দিয়ে জয় করতে হয়। সত্যিকারের পালোয়ান সেই যে পাহাড় সমান কথার তিক্ততা সহ্য করতে পারে।
৯) ভিক্ষা নয় – ভিক্ষা কে আপনি কেমন ভাবে দেখেন? কেউ কি খুব সহজেই ভিক্ষা করতে পারবেন? ভিক্ষা তাদের জন্যই যাদের কাজ করার মত শক্তি নেই, কোনো অঙ্গ হারিয়ে ফেলেছে। কিন্ত আপনি রাস্তায় বের হলে অনেক ভিক্ষুক দেখবেন যাদের সব কিছুই আছে কিন্তু নিজের আত্নসম্মান বলতে কিছুই নেই। চাইলে ওরা কাজ করে নিজের জীবন চালাতে পারে কিন্তু সেই ইচ্ছা বা মন মানসিকতা নেই, সহজ পথ হচ্ছে ভিক্ষা করা। আত্নসম্মান কি, কি তার মূল্য এসব ওরা জানেই না। যার আত্নসম্মান বলতে কিছু আছে সে কখনো ভিক্ষা করার মত নিচু কাজ করবে না যতক্ষন তার কাজ করার ক্ষমতা থাকবে।
১০) দুই বন্ধু – ভোগ বিলাসে যাদের জীবন কাটে তারা কখনো জীবনের কষ্ট গুলো সহ্য করতে পারেনা, ঠিকে থাকতে পারেনা কষ্ট বা খারাপ সময়ে। বেচে থাকতে হলে খেতে হবে, কিন্ত অতিরিক্ত খাবার কখনো কাম্য নয়। খাবার ছাড়া যাদের অন্য কিছু চলেনা তাদের যদি একদিন না খেয়ে থাকতে হয় তাহলে তারা চোখে কিছুই দেখতে পারেনা আর এইভাবে চলতে থাকলে মৃত্যু অনিবার্য। অন্য দিকে যে কষ্ট সহ্য করতে পারে সে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। খাবার শক্তি যোগায় ঠিকি কিন্তু অতিরিক্ত খাবার কখনো তা করেনা বরং উল্টা হয়।
১১) জুতোর দুঃখ – আপনি যখন অভাবে পড়বেন আপনার জীবনের সব চাওয়া পাওয়া উড়ে যাবে। আপনি টাকার জন্য গ্লাস কিনতে পারছেন না সেই জন্যে আপনার অনেক দুঃখ। ভাবছেন একটা গ্লাস ই কিনতে পারছিনা এটা কি জীবন বলে? আপনি রাস্তায় বের হলে দেখবেন অনেক আছে যাদের চোখ ই নেই, পৃথিবীর এত রুপ,এত আলো, এত সুন্দর কিছুই তারা দেখতে পারেনা। আপনার তো চোখ আছে তাহলে ভাবেন ওদের জীবন কেমন যেখানে কোনো আলো নেই। যা পেয়েছেন তা নিয়ে খুশি থাকার চেষ্টা করেন, এটা ভাবেন যে আপনি যা পেয়েছেন অন্য কেউ সেগুলো ও পায় নি ।
১২) হাসিঠাট্টা – আপনি বিপদে পড়ছেন, ভাবছেন কেউ আপনাকে সাহায্য করবে, আশায় আছেন বা অন্যকে বললেন। কিন্ত বেশির ভাগ সময় আপনার ভাবনার উল্টা হবে। কারো সাহায্য কামনা করা মানে নিজেকে তাদের হাতে তুলে দিলেন পরের বার বাশ দেওয়ার জন্য। আপনি আপনার সমস্যার কথা কাউকে বলা মানে নিজের হাতে অন্যের কাছে নিজের পায়ে খুড়াল মারার হাতিয়ার তুলে দিলেন। কারন মানুষ এই রকম ই, আপনাকে সময়ে সাহায্য না করতে পারলেও ঠিক সময়ে আপনার সেই অবস্থা দিয়ে বাশ দিতে পারবে।
১৩) বিশ্বাস – বিশ্বাস জিনিস টা আসলে কি? আপনারা আমাকে বুঝিয়ে দিবেন আশা করি।
মানুষ মানুষকে তার ভাল খারাপ সব কিছু খুলে বলে এই বিশ্বাস থাকার কারনেই। আপনি চাইলে কারো বলা গোপন কথা দিয়ে থাকে আঘাত করতে পারেন এটা সে জানে তারপরেও কেন বলে, কারন সে বিশ্বাস করে যে আপনি তার বিশ্বাস রাখবেন। তাই কখনো কারো বিশ্বাসে আঘাত করবেন না কারন একবার আঘাত পেলে পরের বার আর কখনো সেই জায়গা ফিরে পাবেন না।
১৪) গুণের আদর – আপনি দেখতে অনেক সুন্দর, স্মার্ট, সেই মাপের শিক্ষিত, অনেক টাকার মালিক। কিন্তু এই সবকিছু আপনাকে যা দেবে তা সাময়িকের জন্য। আপনার এই সব কিছু কখনো আপনাকে অন্যের কাছে সম্মানীত করতে পারবে না। যত টা সম্মানীত করতে পারবে আপনার মধ্যে থাকা ভাল কিছু গুন। তাই সুন্দর আর স্মার্ট হওয়ার চেয়ে গুনবান হওয়া বাঞ্চনীয়। সর্বকালে সব সময় গুনের কদর ছিল, আছে আর থাকবে।
১৫) জীবন – মৃত্যু – জীবন যেমন ছোট তেমনি অনেক বড়। কাজের মাধ্যমেই সেটা ছোট আর বড় হয়। জীবন তার মত করে ফুরিয়ে যাবে, তাকে কাজে লাগাতে পারলেই জীবনের অর্থ বুঝতে পারবেন নয়ত সময় ফুরিয়ে হায় হায় করলেও কাজ হবেনা। লোহায় যখন মরিচা ধরে যায় তখন সেই মরিচা আর উঠানো যায় না। এই লোহা কোনো কাজে আর আসেনা, মানে এই লোহার সময় শেষ, ঘরের কোথাও আর এই লোহার জায়গা হয়না।
১৬)শিক্ষিকের মর্যাদা – যে শিক্ষক তার ছাত্র কে আদর্শ বান,সৎ ও সুন্দর শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চায় বা করে সেই শিক্ষকের মর্যাদা সব সময় সবার উপরে থাকে। শুধু তাই নয় শিক্ষকের মর্যাদা সর্বদা উপরেই থাকা উচিৎ। শিক্ষক যেমন ই হোক উনার থেকে আপনি ভাল না হলেও খারাপ কিছু শিখেছেন। যা কিছুই শিখে থাকেন তার জন্য কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ। ভাল খারাপ সবকিছুতেই আপনারা ইচ্ছা জড়িত থাকে। শিক্ষা নেওয়া একান্তই আপনার নিজের ব্যাপার, আপনি যেমন ইচ্ছা শিক্ষা নিতে পারেন।
১৭)যুদ্ধ দেখে পলায়ন – মুখে সবাই সব কিছু বলতে পারে বা কাউকে দেখে আপনার মনে হতে পারে সে অনেক কিছুই জানে, পারে। শুধু মুখের কথায় আর অল্প ক্ষনের চোখের দেখায় এমন বিশ্বাস করবেন না যে আপনার সবচেয়ে খারাপ সময়ে নিজের প্রান নিয়ে পালিয়ে যায়।
১৮)দয়ালু হাতেম তাই – এইখানে বলার কিছু নেই, হাতেম তাই সম্পর্কে সবাই জানেন। এইখানে লাস্ট কথাও আগের মতই,,, কারো অনুগ্রহে বেচে থাকার চেয়ে নিজে কষ্ট করে বাচা অনেক সম্মানীয়।
১৯)যখন খিদে লাগে – এইখানে নতুন যে নামটা জানতে পারলাম সেটা হল ” বসরা ” একটা জায়গার নাম। গোলাপফুলের শহর হিসাবে বিখ্যাত।
এইখানে বলতে মনে আসে সেই লাইন ” ক্ষুদার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্নিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি “।মানুষ যখন খিদার জ্বালায় ছটফট করে তখন খিদা নিবারনের জন্য এক বাটি খাবার ও মনি মুক্তা হিরা জহরত থেকে অনেক মূল্যবান হয়।
২০)ভুল চিকিৎসা – আপনি যে সমস্যায় আছেন তা থেকে মুক্তি পেতে হলে সমস্যা অনুযায়ী সমাধান দরকার। আপনি যদি আপনার সমস্যার সমাধান কিভাবে হতে পারে, কিভাবে করবেন তার নুন্যতম জ্ঞান না রাখেন তাহলে সমস্যা কখনো সমধান করতে পারবেন না। আপনি খাওয়ার জন্য তরকারি রান্না করলে সেখানে সব কিছুই পরিমান মত দিতে হয়, আপনি সব কিছুই দিলেন কিন্ত লবন কম দিলেন, এখন লবন এর পরিমান ঠিক করতে গিয়ে যদি আপনি আবার মরিচ দিতেই থাকেন তাহলে সেটা কেমন লাগবে খেতে? আপনারা একবার দিয়ে খেয়ে দেখতে পারেন, তারপর জানাবেন কেমন হয়েছিল?
২১)চতুর – আপনার, আমার আশেপাশে অনেক চতুর লোক ঘুরাঘুরি করে। সময় পেলেই আপনাকে, আমাকে তার ফাদে ফেলে দিতে পারে । যখন তখন কিছু বলে আপনার থেকে কিছু হাতিয়ে নিতে পারে, যদিও আপনি জানেন সে কেমন। তবে এদের কে ঠিক সেই সময়ে কিছু না বলাই ভাল। সব সময় ভাল দের জন্য ভাল কিছু করবেন এমন না মাঝে মাঝে খারাপ দের জন্যেও ভাল কিছু করত্ব হয়, হয়ত আপনার এই ভাল কিছু তাকে অনেক কিছু বুঝতে সাহায্য করবে।
২২)পালা বদল – ভাগ্য বলে কিছু আছে,, এই কথা কি আপনি বিশ্বাস করেন? যদি করে থাকেন তাহলে কখনো কারো অবস্থা দিয়ে তাকে বিচার করবেন না। আপনার অনেক কিছু আছে বলে আপনার থেকে কম আছে এমন কাউকে অবহেলা করবেন না। ভাগ্য বড়ই নিষ্ঠুর। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না যে ভাগ্য কিভাবে আপনার সেই সব কেড়ে নিতে পারে যা দিয়ে আপনি অন্যকে ছোট করেছেন। এমন ও হতে পারে যে আজকে যে অবস্থার জন্য আপনি কাউকে অবহেলা করলেন ঠিক একই অবস্থায় আপনি নিজে দাঁড়াবেন।
২৩)ঘোড়া – এটাও হাতেম তাই কে নিয়ে। আপনার অনেক আছে তাই আপনি অন্যকে সাহায্য করতে পারবেন। কিন্তু এমন কিছু কি দিতে পারবেন যা আপনার অনেক প্রিয়। কেউ যদি বলে তাহলে লোক মুখের লজ্জায় তাকে ধমক না দিতে পারলেও বিরক্তি ভাব প্রকাশ করবেন। নিজেকে সর্বোচ্চ্ শ্রদ্দা আর ভালবাসায় জায়গায় নেওয়া যায় যখন অন্যের জন্য নিজের প্রিয় কিছুও বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকবেন।
২৪)মহৎ যিনি তিনিই বড় – আগের মতই, কেউ খারাপ বলে নিজেকে ও খারাপ হতে হবে এমন না। তাহলে ভাল আর খারাপের মধ্যে কোনো তফাৎ ই থাকেনা। আপনার ক্ষতি কেউ করেছে এটা জেনেও যখন আপনি ওই ব্যক্তির বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারবেন তবেই আপনার মহানুভবতা প্রকাশ পাবে।
২৫)কৃপণের গল্প – আপনি যা কিছু অর্জন করলেন সেগুলোর যদি সঠিক ব্যবহার করতে না পারেন তাহলে এই অর্জন করার মূল্য নেই।
২৬) অত্যাচারী বাদশাহ – ক্ষমতা আছে বলে আপনি যা খুশি করতে পারেন বটে কিন্ত আপনার কিছুই কখনো কারো ভাল করতে পারবে না। আর আপনার কাজে যদি কারো ভাল কিছু না হয়, মানুষের ভালবাসা যদি অর্জন করতে না পারেন তাহলে আপনার টাকা পয়সা, আদিপত্যে মূল্যহীন।
২৭)প্রানীর প্রতি ভালবাসা – ভালবাসা শুধু মানুষের মাঝে সীমাবদ্ধ না। জগতের প্রতিটা প্রানীর মধ্যেই ভালবাসা আছে আর তাই এত সুন্দর ও বিচিত্র কিছু আমরা দেখি। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ আর মানুষের সেই শ্রেষ্ঠত্ব তখনি প্রকাশ পায় যখন মানুষ সকল জীবের প্রতি তার ভালবাসা প্রদর্শন করে।
২৮)কুকুরের কাজ – এটা আর বলে কি বোঝাবো, কুকুরের কাজ কি তা সবাই জানি। কিন্তু এইখানে কুকুর বলে বোঝানো হয়েছে মানুষ নামের অমানুষ গুলোকে। অমানুষ তো তার মতই কাজ করবে তাই বলে আপনিও তার মত হয়ে যাবেন? কুকুরের কাজ কামড়ানো, মানুষ হিসেবে আপনার কি করা উচিৎ? নিজেই বিচার করুন।
২৯)দয়ালু বাদশাহ – এইখানে ও সেই প্রহরীর কথা বলতে হয়। প্রহরীর দায়িত্ব নিলে তা যথাযথ পালন না করলে সেই দায়িত্ব না নেওয়া ই ভাল। কারো ঘরের প্রহরী হলে সেই ঘরের কারো নিরাপত্তা, ভাল মন্দ কিসে তা যদি বুঝতে না পারেন তাহলে প্রহরী কাজে নিযুক্ত হওয়া ভুল।
৩০) কোমলতার জয় – কোমলতা এমন একটা গুন যা সবার থাকেনা। আপনি যা কিছু এই একটা গুন দিয়ে জয় করতে পারবেন তা অন্য সব কিছু দিয়েও পারবেন না। এমন ও হতে পারে আপনার কোমলতা আপনার জীবন কে মৃত্যুর মুখ থেকেও বাচিতে দিতে পারে। ছিন্ন করে দিতে পারে পাথরে ঘেরা দেয়াল।
৩১)চিল আর শকুন – আপনি অন্য কারো চেয়ে অভিজ্ঞ, দক্ষ হতেই পারেন। তাই বলে অন্য কারো দক্ষতাকে ছোট করে দেখবেন না। হয়ত সে সেই সব পারে যা আপনি পারেন না। আপনি যা পারেন তার মাঝেও না পারা অনেক কিছু থাকে যা করতে গিয়ে আপনি প্রান হারাতে পারেন।
৩২)সকলেই পরাধীন – সবাই বলে আমি স্বাধীন হতে চাই। পরাধীন অবস্থায় কেউ থাকতে চায়না। হয়ত আমরা এক সময় কিছু থেকে স্বাধীন হই। কিন্ত আসলে কি সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাই? কখনোই না, জীবনে আমরা কোনো না কোনো কিছুতে পরাধীন থেকেই যাই। সময় ফুরিয়ে যাবে, মৃত্যু ঘনিয়ে আসবে, আমরা এখন ও তাই করি যাতে করে নিজের ভাল থাকার সাথে আসেপাশে থাকা মানুষ গুলো ভাল থাকে। সাগরে পাড়ি দেওয়া বিশাল জাহাজের নাবিক তার ইচ্ছা মত দিক নিতে পারব কিন্ত যদি সেখানে ঝড়ের কবলে পড়ে তখন সুদক্ষ নাবিক ও কিছু করতে পারেনা, তখন তার আর্তনাদের চিৎকার ও কেউ শুনে না।
৩৩)গোপন কথা – গোপন কথা! কার কি গোপন কথা আছে সব পোস্ট পড়ার পর বলতে হবে। গোপন কথা কি বলার জন্য হয়? বলার জন্য হলে গোপন কথা হলো কিভাবে। তাই যত পারেন সেটা নিজের মধ্যেই ঘুম পাড়ান। কারন অন্য কেউ আপনাকে যতই যা বলুক কোনো এক সময় সে আপনার বলা কথা প্রকাশ করবে না তার কোনো গেরান্টি নেই আর তখন যা হবে সব কিছুর জন্য আপনি নিজেই দায়ী থাকবেন। কারন আপনি নিজেই নিজের গোপন কথা গোপন রাখতে পারেন নি।
৩৪)বুদ্ধিমান মন্ত্রী – ভরসা করতে হলে তাকেই করুন যে আপনার ভরসা রাখতে পারবে। যাকে আপনি ভাল করে জানেন, ধারনা আছে যে সে কি করতে পারে। আর সেটা কোন বুদ্ধিমান মানুষ কে করাই উচিত কারন বোকা রা আপনার বিপদে বা সুখে সব সময় নিস্ক্রিয় দর্শক এর ভুমিকা পালন করবে। আপনি বিপদে পড়লে সে না পারবে নিজেকে বাচাতে না পারবে আপনাকে বাঁচাতে।
এই ছিল শেখ সাদীর বই রিভিউ। পড়ার সময় ভেবেছি রিভিউ লেখতে বসার সাথে সাথে শেষ হয়ে যাবে, কিন্ত লেখতে গিয়ে এমন টা মনেই হয়নি। লেখা তো শেষ হতেই চায়না। মানুষ কেমনে রিভিউ লেখে বুঝিনা। আমার রিভিউ এত লম্বা হলো কেমনে? আমি হয়রান হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছি। তাও ভাল লাগল যে শেষ পর্যন্ত লিখতে পেরেছি। গ্রুপে অনেক পোস্ট দিলেও বই রিভিউ এর এটাই প্রথম, তাই ভুল ত্রুটি হলে সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থী। ধৈর্য না হারিয়ে সবাইকে পুরো পোস্ট টি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি, আপনারা যদি না পড়েন তাহলে কষ্ট করে লেখার মানেই থাকবেনা, বুঝতে পারবো না যে কেমন হয়েছে। পুরো টা পড়লে বুঝতে পারবেন কেমন আর আপনাদের বলা থেকে আমি বুঝতে পারবো আমি কত টা স্বার্থক।
ধন্যবাদ সবাইকে। স্পেশিয়ালি ধন্যবাদ MH Maruf ভাইয়াকে, উনি বই টা দিয়েছেন বলেই পড়তে পেরেছি আর আজকের এই লেখা লিখতে পেরেছি।