সিলেট ভ্রমণ রোজার ইদের এক সপ্তাহ আগে অনেক মনকষ্ট নিয়ে কুমিল্লা ছেড়ে আসার আগ মুহূর্তে আমার এক বন্ধুকে আমার অবস্থা বিস্তারিত জানালাম। তাকে কথায় কথায় বললাম, আমার কোথাও চলে যেতে মন চাচ্ছে। এই কথা শুনে তার উর্বর মাথা থেকে প্রথম যে প্রস্তাব বের হলো তা ছিল এমন, তুই শুধু জায়গার নাম বল, তোরে আমি এই মাথা থেকে ওই মাথায় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসব!
তার এই ভাব দেখে আমার প্রথম যে নাম মুখে আসলো তা হলো সিলেট, রাতারগূল!

সিলেট ভ্রমণ পরিকল্পনা যেভাবে বাস্তবায়ন হল

এক ফেসবুক ফটোগ্রাফার ফ্রেন্ডের কিছু ছবি দেখে আমি স্বপ্নে অনেক বার সিলেট ভ্রমণ করে এসেছি। তার কাছ থেকে যাওয়ার সব নিয়মকানুন ও জেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু তা যে এইভাবে পূরণ হয়ে যাবে কল্পনাতেও ছিল না।

যেই বলা সেই কাজ।  অনায়াসে তিনদিন ঘুরে আসা যাবে আর পছন্দের জায়গা গুলোও দেখা যাবে।  সকল প্রকার গোপন আয়োজন ও প্রকাশ্য অভিনয় সেরে ২২ তারিখ রাতে সৃষ্টিকর্তাকে ডেকে ডেকে বাসে চেপে পরিবারের সবাই মিলে রওনা দিলাম চট্টগ্রাম থেকে রাত ৯ টা ৩০ মিনিটের বাসে।
সাথে কাপড় আর প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নিয়ে নিলাম। পথে কুমিল্লা ক্যান্টনম্যান্ট এরিয়াতে বাস তল্লাশি করা হলো। তখন রাত প্রায় ২ টা। ঐ সময়ের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। সারা সিলেট ভ্রমণ এর প্রথম রোমাঞ্চকর মুহূর্ত ওইটাই ছিল। দুইপাশে রাস্তায় ঘুটঘুটে অন্ধকার।

সিলেট পৌঁছাতে ভোর ৬টা ৩০ বাজল। ৭ টার মধ্যে হোটেলে চেকইন করলাম। তারপর সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘুম। উঠেই তৈরী হয়ে রওনা দিলাম হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজারে। হোটেল থেকে ৫ মিনিটের হাটা পথ ছিল। মাজারে ঢুকেই কর্তৃপক্ষকে মনে মনে একচোট বকাবকি করে মাজার যিয়ারত করলাম।
এরপর দরগা গেইট থেকে লোকাল সি এন জি নিলাম শাহ পরানের মাজার পর্যন্ত। যেতে যেতে আমরা টাকওয়ালা সি এন জি ড্রাইভারের প্রেমে পড়ে গেলাম !
তাকে যত প্রকারের তেল দেয়া যায় দিলাম। ঊদ্দেশ্য একটাই, যদি সে কিছু কম খরচে আমাদের সিলেট ঘুরিয়ে দেখায়।
তার টাক মাথায় তেল দিতে দিতে আমরা শাহ পরানের মাজারে পৌঁছে গেলাম। এখানে এসে আবারও মনে মনে উত্তম মধ্যম দিয়ে যিয়ারত শেষ করলাম। এরা একহাত বাড়ে একটা ছবিও তুলতে দিল না।
যাই হোক মাজারের পর্ব সেরে আবারও ড্রাইবার পটানোর মিশনে নামলাম। পরে তাকে অনেক ভুজুং ভাজুং দিয়ে সহনশীল ভাড়ায় রওনা দিলাম আমার স্বপ্নের রাতারগুলে।

রাতারগুল

সিলেট ভ্রমণ এ এসে রাতারগুল মিস করবেন না কেউ । রাতারগুল হলো বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট এবং সারাবিশ্বের গুটিকয়েক স্বচ্ছ পানির সোয়াম্প ফরেস্টগুলোর একটি। যার পরিপূর্ণ সৌন্দর্য্য একমাতে বর্ষাকালেই দেখা সম্ভব। এই বন গোয়াইন নদীতে অবস্থিত।  তাই এর ভিতরে পবেশ করতে হলে গোয়াইন নদীর ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করতে হয়। অনেক দর কষাকষি করতে হয় মাঝিদের সাথে।ঘাট থেকে নৌকাই বনের ভিতরে যেতে ৩০ মিনিটের মত লাগে। আমাদের মাঝি ছিল বড়ই রসিক। আমাদের লাফালাফি দেখে সে প্রথম গান ধরলো “অপরাধী”।
সাথে আমরাই বা কম যাই কিসে। গানের সুরের, তালের, ভাষার মা বোন করে দিয়ে যখন চিটাঙ্গইগা ভাষায় কথা শুরু করলাম। তখন সে আবার গান ধরলো, “মদু খই খই বিষ খাওইলা’…
এভাবে ৩০ মিনিট পর আমরা প্রবেশ করলাম ঘন সবুজ স্বর্গে। মনে হচ্ছিল যেন দুইপাশের গাছগুলো স্বচ্ছ ১০ ফুট পানিতে দাঁড়িয়ে
ডালপালা মেলে আমাদের বরণ করে নিচ্ছে। আর হালকা বাতাসে জানান দিচ্ছে এর প্রাকৃতিক প্রশান্তি। শান্ত পানিতে গাছের ডালপালার ফাকে ফাকে জায়গা করে এগিয়ে যাওয়া। সবুজ পাতার ফাঁকে সূর্যের খেলা করা। স্বচ্ছ পানির নিচে বাড়তে থাকা কচি গাছেদের টিয়া রং এর পাতার হাতছানি। সত্যিই ক্যামেরায় বন্দি করা অসম্ভব ছিল। এই সৌন্দর্য্য প্রতিটি রোমে রোমে অনুভব করা যাবে শুধু। বন পার করে কিছু গেলেই ওয়াচ টাওয়ার। যেখানে দাঁড়িয়ে পুরো জায়গাটি দেখা যায়। দূর দূরান্তে শুধু সবুজাভ পানি আর পানি। তার মাঝে মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শত শত গাছ। নদীর পানি গিয়ে মিশেছে হাওড়ে। মাঝে পিচঢালা রাস্তা।
প্রায় আড়াই ঘন্টা ঘোরার পরও আমার একটুও ইচ্ছে করছিল না ফিরে আসি। কিন্তু সন্ধ্যার পর ওই পথগুলো নিরাপদ নয়। শুধু এই ভয় দেখিয়ে আমাকে নৌকা থেকে নামাতে পেরেছিল আমার বন্ধু ও তার সহযোগী মাঝি!

রাতারগুল

রাতারগুল রাতারগুল
এক মাথা স্বর্গীয় সুখ আর ভয়াবহ মন খারাপ নিয়ে আবার সি এন জি তে উঠলাম। আসা যাওয়ার পথে অনেকগুলো ছোট বড় চা বাগান পরে। তার এক্টিতে নেমে আমরা ছবি উঠালাম। যদিও চাবাগানের আসল রুপ দেখতে হলে জাফলং বা শ্রীমংগলই সেরা। আমাকে আবার এখানে জোঁকের ভয় দেখিয়ে নামানো হলো। আর প্রতিজ্ঞা করা হলো শীতকালে আমাকে শ্রীমংগলের জোঁকহীন চা বাগানে ছেড়ে দেয়া হবে..

ঐ যে বলেছিলাম, সি এন জি ড্রাইভারের কথা।তো সে এবার আমাদের জালে পুরোপুরি আটকা পরে গেছে। রাতারগুল ঘুরে গোয়াইন ঘাট থেকে ফিরতে ফিরতে সে আমাদের সাথে অনেক কথা বলল। নিজে থেকেই ২টা চা বাগানে গাড়ি থামিয়ে চা বাগানে ছবি তুলতে বলল। কিছু বকের ঝাক দেখাল। কি যে সুন্দর লাগছিল!
এত অসংখ্য বক ছিল ওই গাছে যে পাতাই দেখা যাচ্ছিল না।
এই হলো নতুন জায়গায় নতুন মানুষের সাথে সখ্যতা করার আনন্দ। তাদের সাথে আন্তরিক হলে নিজেরাই আপনাকে সময় দিয়ে তাদের এলাকা দেখিয়ে দেবে। তখন টাকা কিংবা সময় কোনটার হিসাব কষবে না।
তার কাছ থেকে জেনে নিলাম পরের দিন কোথায় যাওয়া যায়। সে বলল চিন্তা করবেন না আমি আপনাদের সব ঘুরিয়ে দেখাব। শুধু একটু সকাল সকাল বের হবেন।আর রাতে আমাদের খুব করে বলল পাঁচ ভাই হোটেলে ভাত খেতে। যদিও আমাদের আগে থেকেই প্ল্যান ছিল কোথায় যাব। তারপরো ড্রাইভারের কাছ থেকে ভাল করে পথঘাট জেনে নিয়ে, তার মোবাইল নম্বর নিয়ে, ভাড়া দিয়ে বিদায় নিলাম। তখন সন্ধ্যা ৭ টা ৩০ মিনিট।
তারপর হোটেলে এসে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে.৯ টায় বের হলাম জিন্দাবাজারের উদ্দেশ্যে। ওখানেই পাঁচ ভাই হোটেল। সেখানে রাতের খাবার শেষ করলাম। কম খরচে খাবার ভাল ছিল।
আমি মাছ খাদক হিসেবে খুবই নিম্নমানের। বলতে পারেন ফার্মের চিকেন টাইপ। তাই বলে সিলেট যাবেন আর বোয়াল, পাবদাঁ খাবেন না তা বড় অন্যায়। তাই হাওড়ের টাটকা বোয়াল আর মুরগীর ঠ্যাং দিয়ে খাওয়া শেষ করে হাটতে হাটতে জিন্দাবাজার ঘুরে দেখলাম। তারপর হোটেলে গিয়ে আর্জেন্টিনার অর্ধেক খেলা দেখে দিলাম ঘুম।

বিছানাকান্দি

কাজ না থাকলে যেই আমাকে সকাল ৯টায়ও গদার বাড়ি দিয়ে ঊঠানো যায় না সেই আমি সকাল ৭ টা থেকে আমার ফ্রেন্ডের মাথা খাওয়া শুরু করলাম। আমি তখন চোখে বিছানাকান্দি ছাড়া কিছুই দেখি না।
মজার ব্যাপার হলো সিএনজি সকাল ৮ টায় এসে হাজির! ৮.৩০ শের মধ্যে আমরা সকালের খাবার খেয়ে রাস্তায় নেমে গেলাম। ভেবেছিলাম লোকালে যাব কিন্তু ৯ টা ৩০ পর্যন্ত অপেক্ষা করে কাউকে না পেয়ে শেষে রিজার্ভ রওনা দিলাম পীরের বাজার নৌঘাটের ঊদ্দেশ্যে।
এই সেই সিলেট যার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেই কবি হওয়া যাবে। যতদূর যাবেন শুধু সবুজ আর ধূসর পাহাড়ের সারি আপনার হৃদস্পন্দন বাড়াতে থাকবে। যতই গন্তব্যের কাছে যবেন ততই স্পস্ট হয়ে উঠবে পাহাড়ের বুক চিড়ে নেমে আসা ঝর্ণাধারা। পিচঢালা পথের দুইপাশে কেবল পানি আর পানি। মাঝে মাঝে ভেসে ওঠা চড়ে গাছেদের গাদাগাদি করে বেড়ে উঠা ও গবাদি পশুদের বিচরন আপনাকে মুগ্ধ করবে।

বিছনাকান্দি বিছানাকান্দি বিছনাকান্দি
প্রায় দেড় ঘন্টা পর আমরা পীরের বাজার পৌছালাম। সেখান থেকে সরকারের নির্ধারিত ভাড়ায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা পাওয়া যায়। নৌকা ভাড়া করে উঠে পড়লাম আমার স্বপ্ন যাত্রায়। সেই এক রোমাঞ্চকর যাত্রার শুরু। দুইপাশের বিশাল বিশাল ঘন সবুজ অরণ্যে ঢাকা পাহাড়! সাথে একেবেকে যাওয়া স্বচ্ছ পানির ধারা এই সৌন্দর্য্য সহ্য করার মত নয়। মাঝে মাঝে খুশিতে এত জোরে চিৎকার করে উঠছিলাম আমরা,মাঝিরাও ভয় পেয়ে যাচ্ছিল।
আরো দেড় ঘন্টা পর দেখা পেলাম সারি সারি ছোট বড় রঙ বেরঙ্গের পাথরের বিছানো পথ। নাম যার সার্থক বিছানাকান্দি। নৌকা ভিড়াতে সময় লাগছিল তাই লাফ দিয়ে নেমে গেছি। হাতে শুধু মোবাইল। পানি তেমন ছিলনা শুরুতে, তাই পাথরগুলো দেখতে অপূর্ব লাগছিল। যতদূর পেরেছি হেটে এসেছি। জায়গাটা ভারত বর্ডারের কাছে হওয়াতে বেশিদূর যাওয়া যায় না।
এক আশ্চর্য স্থান এই বিছানাকান্দি। দুপাশের পাহাড় ভেঙ্গে ছোটবড় পাথর নেমে আসে এর সমতলে। আর সেই পাথর ভিজিয়ে দিতে ঝরঝর করে ছুটে আসে অবিরত ঝর্ণাধারা। যার স্বচ্ছ স্রোতের এক আশ্চর্য উপায়ে প্রাণ পায় পাথরগুলো। আর বেড়ে উঠে নির্দ্বিধায়!

ধীরে ধীরে পানি বাড়তে থাকে আর আমি মাতাল হতে থাকি। কি যে শীতল স্বচ্ছ সেই ধারা। সিলেট ভ্রমণ এ এসে বিছনাকান্দি মিস করলে আফসোস করতে থাকবেন
কবিরা একেই বুঝি তবে কলকল ধ্বনি বলে!!
আমি বিমোহিত হয়ে হাটছিলাম।
প্রখর রোদের তাপ আমাকে একটুও কাবু করতে পারেনি। শুধু তার চিল চিৎকার ছাড়া। স্রোত বাড়ছিল। হাটতে হাটতে অনেক দূর চলে গিয়েছিলাম। তিনি সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন তাই খবর হয়নি। যেই আমাকে বলল, আর যাইস না। আমি ধরাম করে পানিতে পড়ে গেলাম। আধা ভেজা থেকে পুরোই ভিজে গেলাম। পাথরের ফাঁকে পা আটকে ব্যাথা পেলাম। আর তার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে যাব তখন মনে করিয়ে দিল দুপুর ২ টা বাজে। আমাদের ভ্রমণ যে এখনও বাকী। তাই আবার নৌকাই ফিরে গেলাম। উদ্দেশ্য………

ও আমার একুরিয়ামের জন্য কিছু পাথরও নিয়ে এসেছি

পানথুমাই ঝর্ণা

বিছানাকান্দি থেকে ঘুরে নৌকা করে এবার রওনা দিলাম পানথুমাই ঝর্ণা দেখার উদ্দেশ্যে। এবার বিছানাকান্দি ছাড়তে তেমন মন খারাপ হয়নি। কারণ মনে মনে বিশাল ঝর্ণায় ভেজার আনন্দ টগবগ করছিল। বিছানাকান্দি ছেড়ে আরও প্রায় এক, দেড় ঘন্টা পর পৌছালাম পানথুমাই ঝর্ণার কাছে। এই জায়গাটি অপেক্ষাকৃত উচু হওয়ায় পানি তেমন গভীর নয় বললেই চলে। এত স্বচ্ছ পানি, নিচের চিকচিক করতে থাকা বালি দেখা যাচ্ছিল। সাথে কিছু সদ্য গজানো জলজ গাছ পানিকে আরো সবুজাভ করে রেখেছে। এইদৃশ্য আমি আগে টিভিতে দেখেছি । স্বচক্ষে নিজ দেশে দেখবো কখনো ভাবিনি।
এতটুকুতে নিশ্চয় কল্পনায় চলে গেছেন সেই স্বচ্ছ জলে……

জলের নিচে ঘাস পানথুমাই ঝর্ণা পানথুমাই ঝর্ণা এলাকা

এবার আসুন বলি আমার চরম আফসোসের গল্প।
আমাদের সারাদিন খাওয়া হয়নি। সেই খবর কারোরি ছিলো না।
ঝর্ণার কাছাকাছি আশার পর এর বুক চিড়ে নেমে আশা ঢলের প্রচন্ড শব্দে আমি উম্মাদ হচ্ছিলাম। একটু ও তর সইছিলোনা একে ধরে দেখার। তাই ইঞ্জিন নৌকা থেকে নেমে আমরা আবার ডিংগি নৌকাই উঠলাম এর পাদদেশে যেতে, ঠিক যেখানে পাহাড় বেয়ে পাথরে আছড়ে পড়ছে এর ঢল।
কিন্তু ১০-১৫ গজ যাওয়ার পর মাঝি আমাদের নামতে বলল উচু ডাঙ্গায়। আমি প্রশ্ন করলাম নৌকা কি আর যাবে না? বাকীটা কি হেটে যাব? তখনো আরো প্রায় ১৫ গজ দূরে আমার ঝর্ণা।
সে বলল, না। আর সামনে যাওয়া যাবে না।
আমি বললাম, কেন?
তার উত্তর, সেখানে জোঁক আছে। আমি বললাম, আমার কোন সমস্যা নেই। সিলেটে স জায়গায় জোঁক থাকে আমি জানি!
বলে পিছনে তাকালাম ফ্রেন্ডের দিকে। ততক্ষনে সে আতকে উঠলো কিন্তু আমার চেহারা দেখে কিছু বলার সাহস করলো না। সে আবার মাঝিকে জিজ্ঞেস করলো, আপনি সিওর জোঁক আছে ?
এবার সে যা উত্তর দিল তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ব্যাপারটা ছিল এমন, ওখানে যাওয়া যাবে না। যা দেখার দূর থেকেই দেখতে হবে। কারণ ঝর্ণাটা ভারতের বর্ডারে পড়েছে। কাছে গেলেই ফায়ারিং করে দিতে পারে।
আমার এরপরেরকার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। শুধু এটুকু বলতে পারি গলার কাছে দিলা পাকিয়ে কান্না উঠে আসতে চাচ্ছিল। অনেকভাবে মাঝির কাছ থেকে জানতে চেয়েছি কোন কি উপায় নেই। তাহ্লে আমি যে একজনের যাওয়ার গল্প পড়েছি তা কি মিথ্যা। সে বলল, মাসে একবার দুইবার যেতে দেয়, তাও রবিবারে। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনকিছু নেই। তাহলে আমি কোন রবিবার আসবো, কেমনে কি?
মাথা কাজ করছিলো না। আমরা ওভাবে ৪৫মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার ফ্রেন্ড অনেক বুঝিয়েছে আমাকে। আমি নিজেকে বোঝাতে পারছিলাম না, এত কাছে এসে এভাবে ধোকা!
তারমাঝে একবার ফায়ারিং এর শব্দ পেলাম। রাগে, দুঃখে নৌকাই উঠে বসলাম। নৌকা থেকে নেমে পাশেই একটা ভাসমান টং দোকানে বসলাম চা খেতে। সেখানে জগে রাখা পানি খেয়ে জানলাম এই পানি ঐ ঝর্ণার। আমার প্রশ্নবোধক চেহারা দেখে দোকানি জানালো তারা নাকি নদীর মাঝে গিয়ে এই পানি নিয়ে আসে। সত্যি অন্যরকম এর স্বাদ।
প্রবাদ আছে, দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাই। আমি পানিতে মেটালাম।
এরপরও নিজেকে মানাতে না পেরে সাতার না জানা আমি সোজা নেমে গেলাম পানিতে। পানির শীতলতায় আমার সব রাগ, কষ্ট উবে গেল। মনে মনে ভেবে নিয়েছি। কখনও ভারত গেলে এই ঝর্ণা আমি ছুঁয়ে আসবই!

সিলেট ভ্রমণ খরচাপাতিঃ
চট্টগ্রাম থেকে এসি বাসে যেতে ভাড়া লেগেছে ১১০০/- এক জনের
লোকালে গেলে ৬০০-৭০০ পড়বে।
হোটেল ভাড়া ১২০০/- করে ২ দিন ২৪০০/-
১ম দিন
রাতারগুল
সিএনজি ভাড়া-যাওয়া আসা – ৮০০/-
নৌকা ভাড়া- ৯০০/-
দুপুরের খাবার ২৪৫/- তিন জন। ড্রাইভারসহ।
রাতের খাবার পাঁচভাই হোটেল- ৩৭৫/- ২ জন

২য় দিন
সিএনজি ১২০০/- যাওয়া আসা রিজার্ভ। লোকাল গেলে একজন ১৫০/- করে পড়বে।
বিছানাকান্দি + পানথুমাই ইঞ্জিন নৌকা ২৪০০/-
পানথুমাই ডিঙ্গি নৌকা ১০০/-
রাতের খাবার পানশি হোটেল ২৩০/-
আসার ট্রেনের টিকিট ৫০০/- করে। ব্ল্যাকে কেনা হয়েছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ সাথে শুকনা খাবার নিয়ে যাবেন। বোয়াল, পাবদা খেতে ভুলবেন না। পানশি হোটেলের খাবার ভাল লেগেছে। এদের বিখ্যাত হরেক রকমের ভর্তা খেয়ে কান ঝালাপালা হয়ে গেলে আমার দোষ নাই।
আর অনুগ্রহ করে যেখানে সেখানে ময়লা, প্লাস্টকের কাপ, ক্যান ফেলে পরিবেশের সৌন্দর্য্য নষ্ট করবেন না। সাথে থেকে ব্যাগে করে নিয়ে আসবেন।