ইস্পাত বইটির মূল নাম ‘হাও দ্যা স্টিল ওয়াজ টেম্পার্ড’।

ইস্পাত বইয়ের লেখক নিকলাই অস্ত্রভস্কি তার জীবনীকেই এঁকেছেন এ বইয়ে। স্পন্ডিলাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মাত্র ৩২ বছর বয়সে। জীবনের শেষ আটটি বছরের প্রথম চার বছর ছিলেন অন্ধ হয়ে। লাইন সোজা রাখার জন্য তার স্ত্রী তাকে কাগজ সেটে দিতেন কাঠের খাজ কাটা বোর্ডে। আর শেষের চার বছর তার দিন কাটে একেবারে বিছানায়। অন্ধ আর পঙ্গুত্বে জড়াজড়ি করে। ইস্পাত বইটির মূল নাম ‘হাও দ্যা স্টিল ওয়াজ টেম্পার্ড’।

পাভেল করচাগিন। ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লব, ১৯১৮ সালে রাশিয়ায় জার্মান সৈন্যের আক্রমণ আর রাশিয়ার গৃহযুদ্ধে এক নির্ভিক সৈনিক। চৌদ্দ বছরের পাভেল পালিয়ে ছুটে বেড়ায় কৈশোরের প্রেমিকা তানিয়ার হাত ধরে। গৃহযুদ্ধের মধ্যেই পদার্পণ করে যৌবনে। কাজ করে রেস্টুরেন্টের উনুনে, কখনো রেলওয়ের ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসেবে। বলশেভিকদের ক্যাম্পে রাত কেটেছে অনিদ্রায় আর আতঙ্কে। তথাপি পাভেল স্বপ্ন দেখে । অনাহার আর সামাজিক অবিচারের ভেদবুদ্ধি ঠেলে। পাভেল ভালবাসে মানুষকে। মানুষের নীচতা আর অবিমৃস্যকারিতাকে পায়ে ডলে পাভেল এগিয়ে যায় গন্তব্যে! পাভেলের সংস্পর্শে যারা আসে তারাই বদলে যায়! শতে-হাজারে!

ইস্পাত বইটি অনূদিত হয়েছে শতাধিক ভাষায় আর পেয়েছে রাশিয়ার সর্বোচ্চ খেতাব লেনিন অর্ডার। আরেকটি বই ‘বর্ণ অন দ্যা স্টর্ম’ শেষ করতে পারেননি। ইস্পাত ছায়াছবিতেও রূপান্তরিত হয়েছে রাশিয়ায় সেই ১৯৩৫ সালে। রূপান্তরিত হয়েছে ৬টি টিভি সিরিজে রুশ টেলিভিশনে ১৯৭৫ সালে। সর্বশেষ চায়নার উদ্যোগে ২০০০ সালে এ বইয়ের আলোকে আরেকটি টিভি সিরিজ নির্মিত হয় ‘হাও দ্যা স্টিল ওয়াজ টেম্পার্ড’ নামে।

নিকোলাই অস্ত্রভ্‌স্কি ১৯০৪ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত ইউক্রেনের অস্ট্রস শহরের ভিলিয়া গ্রামে একটি শ্রমিকশ্রেণি পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। নয় বছর বয়স পর্যন্ত সেখানেই তিনি স্কুলে যান এবং ১৯১৪ সালে তার পরিবার সমেত রেল স্থাপনার শহর শেপিতিভকায় চলে যান যেখানে তিনি রেলওয়েতে কাজ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি ঐ রেল কোম্পানির রকটি শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসেবে পদন্নতি পান। ১৯১৭ সালে মাত্র তেরো বছর বয়সে তিনি বলশেভিক পার্টির সদস্য হন। সেই সময়ই তিনি একটি মারাত্বক রোগে আক্রান্ত হন যা তাকে পরবর্তীতে কিছুদিনের মধ্যেই অন্ধ এবং সয্যাশায়ী করে দেয়।

দাফতরিক নথি অনুযায়ী জার্মানরা যখন ১৯১৮ সালের বসন্তে তার শহর দখলে নিয়ে নেয় তখন তিনি স্থানীয় বলশেবিভ পার্টি সরিয়ে নেন। যুদ্ধে অনেকবার আহত এবং গুলিবিদ্ধ হওয়ায় তিনি মারাত্বক ভাবে অসুস্থ হন এবং অনেকবার চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হন। তার নিজের লিখা জীবনীতে তিনি কখনই উল্লেখ করেননি যে তিনি রেড আর্মিতে কাজ করেছেন। অসুস্থতার দরূন ১৯২৯ সালের দিকে তিনি চিরতরে তার দৃষ্টিশক্তি হারান। দৃষ্টিশক্তি না থাকার পরেও ১৯৩০ সালের দিকে তিনি তার জীবনের প্রথন উপন্যাস ইস্পাত বা হাউ দ্যা স্টিল ওয়াস টেম্পার্ড লিখা শুরু করেন। পরবর্তীতে তার উপন্যাস এবং লেখনির জন্য কমিউনিষ্ট বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান এবং ১৯৩৫ সালে অর্ডার অফ লেনিন সম্মাননায় ভূষিত হন। মারাত্বক অসুস্থতার দরূন ১৯৩৬ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তার উপন্যাস বর্ন অফ দ্যা স্টোর্ম শেষ করে যেতে পারেন নি।