সোশ্যাল মিডিয়া আপনার বাক্তিগত জীবন ক্রমেই জটিল করে তুলতে পারে, মনে রাখার ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে, কর্মক্ষেত্রের জন্য সমস্যা তৈরি করে, নানা রকম অ্যাপস,সময় নষ্ট ব্যাস সোশ্যাল পরিবারের সাথে দূরত্ব সৃষ্টি করে, সোশ্যাল মিডিয়াতে ভিত্তিহীন-ভূয়া খবর তৈরি হয় সোশ্যাল মিডিয়া প্রশাসনিক বিপর্যয়েরও একটি মাধ্যম ,সোশ্যাল মিডিয়া কর্মক্ষেত্রের জন্য সমস্যা তৈরি করে! অতিরিক্ত সোশ্যাল সাইটের প্রতি আসক্তি এবং এর অপব্যবহার শুধু মাত্র পরিবার ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের জন্যই যে ক্ষতিকর তা না,এটা সমস্যা তৈরি করতে পারে আপনার কর্মক্ষেত্রেও!

রাত জেগে বিভিন্ন চ্যাট গ্রুপে আড্ডা দেওয়া কিংবা ফেসবুকের নিউজ ফিডে নজর দিতে চোখের খুব কাছে ফোন রেখে ব্যবহার করতে করতে কখন যে ঘুমের বরাদ্দ সময় ফুরিয়ে যায় বুঝতেই পারি না আমরা । মাত্র কয়েক সপ্তাহ ধরে এই চললে অভ্যাস হয়ে যায় তখন আমরা ছোটখাটো বিষয়েও দুশ্চিন্তায় ভুগি । কখনও অফিস যেতে বা কারো সাথে দেখা করতে গিয়ে পাঁচ মিনিট দেরি হলে ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে কারো জন্য অপেক্ষা করতে অস্থির লাগে, কাজে মনোযোগ দিতে পারি না, মন অস্থির লাগে , ছোট খাট অবহেলা মেনে নিতে পারি না । সোশ্যাল মিডিয়া দৈনন্দিন জীবনের অংশ। ব্যক্তিত্ব বিকাশে এই মাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে অবশ্যই। কিন্তু অতিরিক্ত সময় কাটানোর জেরে কম ঘুম, ক্লান্তি ও যে কোনও বিষয়ে অকারণ উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। কমে যাচ্ছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা।

ধরুন আপনার ছবি তোলার শখ বা আকাআকি বা লেখালিখির শখ সেই শখেই বিভিন্ন সাইটে প্রোফাইল খুলেছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার সৃষ্টি হয়ত মানুষ পছন্দ করলো বা করলো না তখন আপনার এই ভার্চুয়াল এ্যাসেট গুলো আপনার কাছে মূল্যবান মনে হতে শুরু করবে যা আপনার দৈনন্দিন জীবনের সময় এঙ্গেজ রাখতে বাধ্য । জীবনে এইগুলির দরকার আছে কিন্তু এটা আপনার অশান্তির কারন না হয় যেন, আপনি যদি ধীর স্থির থাকেন তাহলে যে কোন পরিস্থিতি সামল দিতে সঠিক সিধান্ত নিতে পারবেন কিন্তু অশান্তি তে থাকলে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে আপনাকে বাধা পেতে হবে নিজের কাছ থেকেই

এখন অনেকেই আমরা করি কি সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ এ গ্রুপে থাকি এবং আমার মতের বাইরে যে কথাগুলো যায় না সেগুলো নিয়ে আমরা তর্ক করি । এই তর্ক করার বিষয়বস্তু গুলো আমাদের মনের মধ্যে আস্তে আসতে অশান্তি তৈরি করে কেউ আমাকে একটা বাজে কথা বলবে আমি একটাও উত্তর দিলাম সেও বা তারাও পাল্টা উত্তর দিল এভাবে আসলে একটা অশান্তির ক্ষেত্র তৈরি হয় যা আমাদের মাথার ভিতরে অনেকক্ষণ বা অনেকদিন ধরে থাকে । আর যে মানুষগুলোর সাথে আপনি তর্ক করেছেন সেই মানুষগুলো যদি আপনার পরিচিত হয় তাহলে তাদের সাথে আপনার সম্পর্ক খারাপ হতে বাধ্য আর অপরিচিত মানুষ যদি হয় তাহলে কি হবে আপনার দেখতে হবে এই মানুষগুলোকে চেনেন না অথচ আপনি তাদের সাথে তর্ক করছেন কেন রেজাল্ট কি ? আপনি ঠিক বললেও তারা মানবেনা , আপনি কিছুই প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না ।

প্রায় এক হাজার সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীকে নিয়ে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল এক বেসরকারি সংস্থা। তাতে দেখা যাচ্ছে, তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশের মানসিক চাপের কারণ সোশ্যাল মিডিয়া। সেখানে অতিরিক্ত সময় কাটানোয় ৯০ শতাংশ ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। কম ঘুমের জেরে তৈরি হচ্ছে মানসিক চাপ। যার মধ্যে ৬০ শতাংশ সম্পর্ক হারানো বা সামাজিক সম্মান হারানোর মতো বিভিন্ন আশঙ্কায় ভুগছেন। আবার ১৪ শতাংশ সেই মানসিক চাপ কমাতে অতিরিক্ত তামাকজাত দ্রব্যে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। মোট ব্যবহারকারীর ৮৪ শতাংশ মনে করছেন, তাঁদের প্রতিদিনের জীবনে পারিবারিক সম্পর্কে কুপ্রভাব ফেলছে সোশ্যাল মিডিয়া।

বিশেষজ্ঞদের এ বক্তব্য কখনও অনলাইনআসক্তদের মুখেই শোনা যায়। মাঝে-সাঝে তাদের বলতে শোনা যায়, হ্যাঙ হয়ে গেছি! মাথা কাজ করছে না।

তথ্যে ভারাক্রান্ত আজকের এই সময়ে নিজেকে সুস্থ রাখতে নিয়মিতভাবে অফলাইনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্টকহোমের কেটিএইচ রয়্যাল ইন্সটিটিউট ‍অব টেকনোলজির গবেষক এরিক ফ্রানসেন।  এরিক ফ্রানসেন বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়া / সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ব্রাউজ করতে করতে এক সময় ব্যবহারকারীর মস্তিষ্ক তথ্যের ভারে জবুথবু হয়ে যায়। আর এ কারণে খুব কম তথ্যই তার মস্তিষ্কে জমা হয়।
এই সমস্যাটা দেখা দেয় মস্তিষ্ক ব্যবস্থায় যা ওয়ার্কিং মেমোরি বলে পরিচিত। অনেকে একে আবার স্বল্প-স্থায়ী স্মৃতি হিসেবে জানেন। যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ে মস্তিষ্কের এ ব্যবস্থার। এরিক ফ্রানসেন বলেন, ‘তথ্য ছাকতে (ফিল্টার করতে) এবং কোনটি যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজন তা নির্বাচনে সহায়তা করে
ওয়ার্কিং মেমোরি। এটি চলমানভাবে কাজ করতে ও চলমান যোগাযোগের কোনটি প্রয়োজনীয় তা সংগ্রহে সহায়তা করে কিন্তু এটি সীমিত।
মানুষের ওয়ার্কিং মেমোরি তিন থেকে চারটি আইটেম ধারণ করতে পারে। কিন্তু যখন ওয়ার্কিং মেমোরিতে ঠাসাঠাসি করে তথ্য রাখতে চেষ্টা করি, তখনই তা আর কাজ করে না।

সোশ্যাল মিডিয়া / সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটানো কেন মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে?
প্রতিযোগিতার যুগে সোশ্যাল মিডিয়া আরও বেশি ভোগবাদী করে তুলছে। ভার্চুয়াল ফ্রেন্ডদের হাইফাই জীবনের ছবিগুলি কখনও জাগাচ্ছে ঈর্ষা। আপনার নিজের মনের ভিতর ভীষণ একটা গ্যাপ তৈরি করে ফেলবে আপনি হয়ে যেতে পারেন হাসিখুশি একজন মানুষ থেকে ভয়ানক হিংসুটে সোশ্যাল মিডিয়ার এই অসীম দিকটাতে আমরা পরাজিত হচ্ছি এর ফল ঊল্টা হচ্ছে আপন জন বিপদে পড়লে একটা স্যাড চিহ্ন দিয়ে বসে থাকি ।

আশপাশের সম্পর্কগুলিকে গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমেই এর সমাধানের পথ মিলতে পারে,
যে জিনিসের বাস্তবিক পতিক্রিয়া আছে তাঁর দিকে আমাদের নজর দেয়া উচিত
তরুণ রা মাঠে নেমে খেলার সঙ্গে অভ্যস্ত হোক। নিয়মিত বই প়ড়া, পরিবারের সঙ্গে বসে আড্ডা দেওয়া কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে , আড্ডা, বেড়ানো, গান গেয়ে সময় কাটানো বা যেকোন পজেটীভ কায়িক কাজ ভার্চুয়াল জগতের দুঃসহ কিছু দিক ছাড়াতে সাহায্য করবে।