আফগান গার্ল শিরোনামে শরবত গুলার ওই ছবিটি তোলা হয় ১৯৮৪ সালে।  যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিদ্ধ সাময়িকী ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি পেশোয়ারের এক শরণার্থী শিবিরের কাছ থেকে ১২ বছরের শরবত গুলার ছবিটি তোলেন। গুলা সেসময়ে শরণার্থীদের একটি স্কুলে পড়তেন।
অনেক দিন পর ২০০২ সালে স্টিভ ম্যাককারি আবার খুঁজে পান তাঁকে। তিনি বলেছিলেন, শরবতের চোখের দৃষ্টি তখনো ছিল সেই আগের মতো তীক্ষ্ণ। মূলত এই ছবিটি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের ১৯৮৫ সালের জুনের সংখ্যায় প্রচ্ছদ হিসেবে ব্যবহার করার ফলে এটি বিশ্বব্যপী আলোচিত হয়ে উঠে; এ সময় শরবত গুলার বয়স ছিল আনুমানিক ১২ বছর। ২০০২ সালের প্রথম দিকে শরবত গুলাকে শনাক্ত করা হয়; এর পূর্বে তিনি আফগান গার্ল নামেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত ছিলেন। আলোকচিত্রটিকে অনেকেই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসার সাথে তুলনা করেন আবার অনেকেই এটিকে আফগান মোনালিসা হিসেবে মনে করে থাকেন।
 
যে ছবি শরবত গুলা কে বিখ্যাত করেছিল, তা প্রথম তিনি দেখেন ভাইয়ের কাছে। শরবত গুলা বলেন, সে সময় খুব অবাক হয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি তুলতে পছন্দ করতেন না। নিজের ছবির এত প্রচারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরে যখন দেখলেন তাঁর সেই ছবিই অনেক শরণার্থীর জীবনকে তুলে এনেছে। তখন খুশি হয়েছিলেন।
 
কিন্তু মহাকাল সেই শরবত গুলা কাছ থেকে কেবল একে একে কেড়ে নিয়েছে দেয় নি কিছু । মধ্য চল্লিশের শরবত গুলা এখন অসুস্থ ও দুর্বল। কিন্তু তার সবুজ চোখ এখনো তীক্ষ্ম। সেই চোখে রয়েছে একই সঙ্গে ভয় এবং আশা। তাঁর স্বামী ও বড় মেয়ে মারা গিয়েছে । অসহায় অবস্থায় অনেক আফগান যুদ্ধপীড়িতের মত শরবত গুলাও পাকিস্তানে আশ্রয় চান এবং ৩৫ বছর ধরে বসবাস করেন। কিন্তু ২০১৬ সালে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ তাকে ধরে জেলে পাঠায়, কারণ তার কাগজপত্র ‘অবৈধ’ ছিল।  তিনি বলেছিলন  “সেখানে ভাল সময় কেটেছে আমাদের, ভাল প্রতিবেশী ছিল, পশতু ভাইদের সাথেই বাস করতাম আমরা।
 
শরবত গুলা বলেন কখনো আশা করিনি শেষমেষ এই আচরণ আমার সাথে করবে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ” পাকিস্তানে পুলিশের হাতে ধরা পড়বার আগেই তিনি আশঙ্কা করছিলেন তিনি হয়তো সে দেশে আর থাকতে পারবেন না।  এজন্য বাড়িটি বেচে দেন তিনি। দেশ ছাড়ার ঠিক দুদিন আগে তার বাড়িতে পুলিশ হানা দেয়। “আমি পুলিশকে বলেছিলাম এই আইডি কার্ডটি আমি বানিয়েছি বাচ্চাদের লেখাপড়া করাতে আর আমার বাড়িটি বিক্রি করবার জন্য। আইডি ছাড়া এর কোনটিই সম্ভব নয় পাকিস্তানে”। তাকে দু সপ্তাহের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। এর এক সপ্তাহ তিনি ছিলেন কারাগারে। আরেক সপ্তাহ ছিলেন কারা হাসপাতালে। তার হেপাটাইটিস সি হয়েছিল। তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে আফগানিস্তানে পাঠিয়ে দেয় পাকিস্তান ।
 
শরবত গুলা র গ্রেফতারের খবর পেয়ে ফটোগ্রাফার স্টিভ তাকে সব ধরনের সাহায্য করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন  স্টিভ বলেছেন, তাকে এবং তার পরিবারকে আইনগত ও আর্থিক সহায়তা করতে যা করা দরকার তার সবই আমি করবো।  উনি বলেছিলেন আমি এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কেননা সারা জীবন ধরে সে নানাভাবে ভুগেছে এবং তাকে গ্রেফতার মানে মানবাধিকারের লঙ্ঘন।
 
কিন্তু নিজদেশের বিপদ নিজে ডেকে আনতে সিদ্ধহস্ত পাকিস্তান সরকার তাকে আটকে রেখে ১৪ বছর জেলের ভয় দেখিয়ে কি পরিমাণ বদনাম হয়েছে সেটা বুঝতে পেরে শরবত গুলাকে পরে পাকিস্তানে থেকে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় , কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।

“তিনি তাদের বলেছিলেন, তোমরা আমাকে ৩৫ বছর থাকতে দিলে, কিন্তু দিন শেষে এমন আচরণ করলে! যথেষ্ট হয়েছে”।

আফগানিস্তানে ফেরার পর প্রেসিডেন্ট ভবনে গিয়ে আশরাফ ঘানির সঙ্গে দেখা করেছেন শরবত। সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইও তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁরা তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন। আর্থিক সহায়তা ও বাড়ি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

শরবত চান সন্তানেরা শিক্ষিত হোক। সুখী জীবন কাটাক। কেবল নিজের সন্তানদের কথাই ভাবেন না শরবত। গরিব, অনাথ ও বিধবাদের জন্য দাতব্য সংস্থা অথবা হাসপাতাল গড়তে চান। তিনি চান, আফগানিস্তানে শান্তি থাকুক।