তখনো আমরা পাড়ার ছেলেরা কিশোর , ফুটবল খেলি কিন্তু খেলাটা কখনোই মজা পাইনি, একেতো ধাক্কা ধাক্কি পছন্দ না, কিন্তু পাড়ার ফুটবলে এটা ইচ্ছে করেই করা হত।
তখন আমরা রাঙ্গামাটি, ফুটবল খেলার জায়গা তেমন একটা ছিল না তেমন, তাই ওরগানাইজ ভাবে খেলার সুযোগ হয় নি, সত্যি বলতে খেলা টা তেমন ইঞ্জয় করতাম না কোন দিন। গোলবার এর নিচে বরাবর জায়গা ছিল এতে তেমন কারো কথা শূনতে হত না কারন ড্রাইভ দিয়ে মাটিতে পড়তে পড়তে পারতাম যেদিকে খুশী সেদিকে, ( ছোট বেলায় পুকুরে বিভিন্ন কায়দায় লাভ দিতে দিতে অভ্যাস হয়ে গেছিল, আর লাভ দিয়ে ১২-১৪ উপর থেকে পড়তেও তেমন ঝামেলা হত না ) তাই বল আটকাতে কোন ঝামেলা হত না, ফুল সাইজ গোল বার হলে একটু প্রবলেম হত কিন্তু সবাই জানত গোল দিতে পারি আর না পারি খাব না ।
এরই ভিতর চলে এল বিশ্বকাপ ৯৮ ফ্রান্স
আবার সেই ব্রাজিল আবার সেই আর্জেন্টিনা তখন এত জার্সি মানুষ পরত না, মুখে মুখে থাকত তারকাদের গুনগান, সেবার আর্জেন্টিনার ফ্যানদের মুখে খালি একটাই কথা সুনি , যদি ম্যারাডোনা থাকত? মাগার ম্যারাডোনার তখনো বিশ্বকাপ চলাকালে সবার মুখে মুখে । উনার একক নৈপুণ্যর ৮২, ৮৬ কারনে আর্জেন্টিনা একটি সাধারন দল নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় অথচ জিকো-সক্রেটিস জুটির সেই ভয়ঙ্কর সুন্দর ব্রাজিল দল হেরে যায় রক্ষন এর দুর্বলতায় । যাক গাব্রিয়েল বাতিস্তুতা, ক্রেসপ, সিমিওনে, বালবো এরা পারেনি ম্যারাডোনা নামের বাহক হতে , যাক বাঙ্গালিরা আসলে জেতা দলের পাগল ।
সেবার মনে আছে চিলি কোন খেলা না জিতেই ২য় রাউন্ড এর উঠে যায় শুধুমাত্র স্ব গুলি ম্যাচ ড্র করে , ব্রাজিল ২ ম্যাচ যেতে , আর আর্জেন্টিনা ৩ ম্যাচ জিতেই ২য় রাউন্ড এ ওঠে, পরে ইংল্যান্ড কে হারিয়ে , শেষ আটে নেদারল্যান্ড এর সাথে হেরে দল তো বাড়ী চলে যায় , কিন্তু বাঙ্গালীর মনে থেকে যায় দল তারা মনে মনে ব্রাজিল এর হার কামনা জিত বলে ধরে নেয় । ব্রাজিল ডেনমার্ক হারিয়ে শেষ আতে নেদারল্যান্ড বাড়ীর প্লেন ধরিয়ে দেয় ফ্রান্স থেকে। ওদিকে জিনেদিন জিদানের ফর্মে থাকা ফ্রান্স ফাইনালে উঠে ইটালি ও ক্রোয়েশিয়া কে হারিয়ে । আর্জেন্টিনা র সমস্ত ফ্যান রাতারাতি ফ্রান্স এর ফ্যান হয়ে যায়, সেই থেকে ম্যারাডোনার ফ্যানে ভাগ বসিয়ে দেন জিদান।
আগে কোন বিশ্ব কাপ জেতা তো দূরে থাক ফাইনাল খেলতেই পারে নি, একবার ৩য় একবার অস্টম, এমন কি ৯০ -৯৪ বিশ্বকাপে তাদের বিশ্বকাপ এর বাছাই পর্ব পার হতে পারে নি । কিন্তু মাঠে জিদান, আর ফিফায় ছিলেন প্লাতিনি জিনি দল যেবার ৩য় হয় সেইবার দলে ছিলেন নিজের অপূর্ণ ইচ্ছে ৯৮ সালে পুরন করে নিলেন ।
জানি ফ্রান্স জবার তুমি দিতে পারবে না।
কিভাবে জিতে গেলে ফ্রান্স কিভাবে? আমার মনে হয় যতটা খেলে তাঁর চেয়ে বেশি আর্জেন্টিনার ফ্যানদের দোয়া কারন তোমার দেশ যা জনগণ তাঁর চেয়ে আমরা বাঙ্গালীরা তোমার ফ্যান ছিল বেশি মনে হয়। ৯৮ এ টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় বেবেতো , রিভালদো, দুঙ্গা, কার্লস সবাই ছিল , কিন্তু সেদিন ছিল না একজন গানার। রোনালদো ফাইনালে বল পেলই মাত্র ৪ বার তাও মনে হল ৫ বছরের একটা ছেলের কাছে থেকে বল কেড়ে নেয়া হল।
“রোনালদোসহ পুরো দল সেবার ব্রাজিলের হয়ে ভালো খেলতে পারেনি। আসল কথা হলো ফাইনালে জিততে না পারা এবং ৩-০ ব্যবধানে হারা কখনো ব্রাজিলের কাছে ভালো খেলা বলে বিবেচিত হয়না। রোনালদোকে নিয়ে ব্রাজিলের মিডিয়ায় বিভিন্ন কথা উঠে গেল।
ব্রাজিলের প্রথম সারির একটি সংবাদ মাধ্যমে ছাপানো হলো, রোনালদো ফাইনালের আগে মানসিকভাবে দুর্বল ছিলেন। কেউ লিখলো, রোনালদো ফাইনালে আগে হতাশায় ছিলেন। রোনালদো দেয়ালের সঙ্গে মোটরসাইকেল মেরে দিয়েছেন- এমন অনেক কথা শোনা গেল। সাবেক প্রেমিকার সঙ্গে আবার বনিবনা হয়ে যাওয়া এবং শারীরিক সম্পর্ক রোনালদোর এমন খেলার কারণ বলেও অভিযোগ উঠলো। এমনকি ব্রাজিল ২৩ মিলিয়ন ইউএস ডলারে ফাইনালের শিরোপা বিক্রি করে দিয়েছে বলেও খবর বেরুল। কিন্তু সবই গুজব; দাবি ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা রোনালদোর। সূত্র: ফোরফোরটু”
সেই বিশ্বকাপ ফাইনালে এ ক্ষিপ্রতা ছিলানা , জয়ের ক্ষুধা দেখিনি তেমন । পরদিন সবাই ফ্রান্স এর কথা কেউ বলে না, ব্রাজিল হেরেছে আমাদের ফ্যানদের এটাই প্রাপ্তি, ব্রাজিল দলের সমর্থক বলাবলি করছে ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছে । প্লাতিনি নিজেই বলেছেন, ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্স এবং ব্রাজিলকে ফাইনালে তুলতে তিনি ‘ছোট একটি চালাকি’ করেছিলেন। ড্রয়ের সময় ইচ্ছা করে ফ্রান্স, ব্রাজিলের নাম আলাদা-আলাদা পাত্রে রেখেছিলেন। যাতে তারা একই গ্রুপে না পড়ে!
ফ্রেঞ্চ ফুটবলের সঙ্গে প্লাতিনিও ওই বছর বিশ্বকাপ আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন প্লাতিনি। উয়েফার সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ‘ফ্রেঞ্চ ব্লু’কে জানান, ড্রয়ের দিন তিনি এমন একটা ব্যবস্থা করেন যাতে ফাইনালের আগে দুই দলের আর দেখা না হয়।