২০১৬ ভারতের গোয়াহাটি সাউথ এশিয়ান গেমস ।

বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজছে আর তার সামনে স্বর্ণপদক গলায় ঝুলিয়ে এক ফুটফুটে ১৭বছরের মেয়ে স্যালুট ভঙ্গী তে দাঁড়িয়ে কাঁদছে -আবেগে, আনন্দে, খুশী তে।
সে মেয়ে টি আর কেউ না – ওয়েটলিফটার মাবিয়া আক্তার সীমান্ত।

প্রস্তুতি শুরু হয় ২০১৫ এর ৮ই আগস্ট থেকে। ট্রেনিং চলাকালীন একটা জিনিষ মাথায় গেঁথে যায় যে ফলাফল যাই ই হোক -ভাল করতেই হবে। ২০১৫ তে ভারতে র পুনে তে কমনওয়েলথ এ সেই প্রতিফলন দেখা গেল। স্বর্নপদক জয়ের মাধ্যমে। সেই থেকে আরো ভাল করার তাগিদ চেপে বসলো মাথায়।
কিন্তু বিধি বাম -সাউথ এশিয়ান গেমসের এক সপ্তাহ আগে হাত ইঞ্জুরি র কবলে পড়ে, কিন্তু সাউথ এশিয়ান গেমস এর কাছে এই ভাঙা হাত কে তুচ্ছ মনে হচ্ছিল। কিন্তু ভেতরের সেই ইচ্ছা , আকাঙ্ক্ষা র প্রতিফলন ঘটাতে ইনজুরি কে পাত্তা না দিয়েই আরো অনুশীলন আরো কঠোর পরিশ্রম করে সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো র তাগিদ টা যেন বার বার নাড়া দিচ্ছিল। সে তাগিদ থেকেই সাউথ এশিয়ান গেমসের স্বর্ন পদক কে দেশের জন্য বয়ে নিয়ে আসেন তিনি।
সেদিনের কথা মনে পড়লে এখনো আবেগি হয়ে পড়েন সীমান্ত। নিজের সেরা টা দেয়া হয়নি -আরো ভাল হতে পারত এমন টাই মনে হচ্ছিল তার নিজের কাছে। তখনো তার জানা ছিল না কত টা সেরা তিনি।

দৌড়ে এসে কোচ সুখবর টা দিতেই খুশী তে আপ্লুত হয়ে ওঠেন। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজছে -স্বর্ন পদক বিজয়ী মাবিয়ার কারনে -সেই আনন্দ অশ্রু ছড়িয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়া র মাধ্যমে বিশ্বের কোটি মানুষের মধ্যে।
২০১০সালে মামা কাজী শাহাদত হোসেনের হাত ধরে ওয়েট লিফটিং এ আসা। মামা র স্বপ্ন নিজের মধ্যে ধারণ করতে শুরু করেন মাবিয়া।
২০১১সালে প্র‍্যাক্টিসের সময় দূর্ঘটনা বশত মাথা ফেটে যায় তখন মাথায় জেদ চেপে যায় -এই ওয়েট লিফটিং থেকে ভাল কিছু না করে ফেরত যাচ্ছেন না মাবিয়া।
জীবনে অনেক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে গেছেন মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। কিন্তু অনুশীলন চালিয়ে গেছেন সব অবস্থা তেই।
২০১৪তে অলিম্পিক এ অংশ নিতে না পারা টা জীবনের এক বড় আফসোস হয়ে ছিল তার জীবনে। তবে ২০১৬ সাউথ এশিয়ান গেমস তার জীবন কে নানা ভাবে পরিবর্তন করেছে।

আর্থিক অবস্থা বদলানোর পাশাপাশি খ্যাতি এনে দিয়েছে তাকে।
প্রধানমন্ত্রী কে খুব কাছ থেকে দেখা, একান্ত আলাপচারিতায় তার সাথে কাটানো সেই সময় কে জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি তার জীবনে।
বাংলাদেশের নারীদের জন্য তিনি বলেন, বাংলাদেশের নারীদের এখন পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে সামনে এগিয়ে যাবার। যত বাধা আছে সেগুলোকে পেরিয়ে যাবার শক্তি টাই আসল -এমন টাই মনে করেন ১৯বছর বয়সী এই তারকা। মাবিয়া র মতে, সবাইকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে এমন কোন কথা নেই। যার যার মেধা আর ইচ্ছাশক্তি দিয়েই নিজের সেরা টা দিতে পারে মেয়েরা। কোন রকম “শর্টকাট ” না নিয়ে পরিশ্রম, সাধনা আর হাল ছেড়ে না দেয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
স্ব স্ব ক্ষেত্র থেকেও যে কেউ সমাজ কে যে কোন ভাল কিছু দিতে পারে-এটা মাথায় রেখে নিজের শতভাগ দিতে হবে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে মাবিয়া বলেন, ২০১৮র এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়া য় অনুষ্ঠিতব্য কমনওয়েলথ এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
নিজের সাফল্যের জন্য কোচ বিদ্যুৎ কুমার রায়, ফারুক শেখর কাজল, শাহরিয়ার সুলতানা সূচি, ক্যাপ্টেন শহীদ র অবদান কে বড় করে দেখেন তিনি।

ফেডারেশন সেক্রেটারি উইং কমান্ডার মহিউদ্দিন আহমেদ এর অবদান তার সাফল্য কে সহজ করেছে,করেছে চলার পথ কে মসৃণ।
৭ই অক্টোবর ১৯৯৯সালে জন্ম নেয়া মাবিয়া আক্তার সীমান্ত পড়াশোনা করছেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে।
১৯ বছর বয়সী এই স্বর্ণপদক জয়ী ওয়েটলিফটার দেশ কে বিশ্বেরদরবারে নিয়ে গেছেন এক অন্য উচ্চতায়।।