পরকীয়া লইয়া সমাচার ।  আসুন আপনাদিগনকে আরও একবার এই উষ্ণ বঙ্গিও সমতটের পাললিক অববাহিকায় ঘন হইয়া বসিবার আমন্ত্রন জানাইতেছি।

এই অধম লক্ষ্য করিয়া দেখিতে পাইয়াছেন যে,পরকিয়া নামক এক ব্যাধি মহামারির ন্যায় ছড়িয়া পড়িতেছে এবং পরিতাপের বিষয় হইল ইহার কোন প্রতিষেধক এই গোলাকার পৃথিবীর কোথাও আমার জানামতে আবিষ্কার করা সম্ভব হয় নাই এবং অদূর ভবিষ্যতেও আবিস্কারের কোনও সমূহ সম্ভাবনা নাহি। কারন যেই মহান বিজ্ঞানী ইহার প্রতিষেধক আবিস্কার করিবেন তিনি স্বয়ং পরকীয়া লিপ্ত হইয়া আছেন অথবা যাইবেন।

এইবার আসুন এই পরকীয়া র একটু ব্যাবচ্ছেদ করিয়া লই।

আমি এই পরকিয়া র কয়েকখানা উৎস খুজিয়া পাইয়াছি। ইহার মধ্যে অন্যতম হইল আপনার সন্তান যে ইশকুলে পড়ে সেই জায়গা। দেখিবেন সন্তানকে ইশকুলে দিয়া এবং আনিতে গিয়া আপনার অনেক বিবাহিত ভাবিদের সহিত পরিচয় হইয়া যাইবে। এই পরিচয়ের সূত্র ধরিয়া আপনি শুরু করিবেন এই ভাবে, আসুন ভাবি পাশের এক দোকানে অসাধারণ চা পাওয়া যায়। আপনি শুধু একবার ইহা পান করিয়া দেখুন না কি চমৎকার ইহার স্বাদ আর ইহা গরুর খাটি দুধ জাল দিয়া ঘন করিয়া ইহা দ্বারা চা তৈয়ারি করা হইয়া থাকে।ভাবি বলিবেন,বলেন কি ভাই এত বিখ্যাত চা ইশকুলের এত কাছের দোকানে পাওয়া যায় আর আমি কিনা এতদিন ইহার কোনও খবরও পাইলাম না। ভাবি তৎক্ষণাৎ ইহাতে রাজি হইয়া গেলেন তো বৃহস্পতি আপনার তুঙ্গে উঠিয়া গেল। ভাবিকে ঐদিনের জন্য শুধু চা পর্বেই সীমাবধ্য করিয়া রাখিলেন। ইহা তো কেবল শুরু হইল। ইহার পড়ে সুকৌশলে ভদ্রলোক এই ভাবির সম্মানিত জামাইয়ের মোটামুটি একখান জীবনবৃত্তান্ত জানিয়া লইবেন। তিনি কি চাকুরী করেন বা ব্যাবসা করিয়া থাকেন,কখন অফিসে যান এবং কখন গৃহে ফিরিয়া আসেন। এইরূপ মাসতিনেক অতিবাহিত হইবার পর দেখিবেন উহারা “ঝসুনধরা সিটি” অথবা “কমুনা ফিউচার পার্কে” যাতায়াত শুরু করিয়া দিবেন। আরও এককাঠি সরেস হইলে দেখিবেন সন্তানকে ইশকুলে নামাইয়া দিয়া নিজ গাড়ি অথবা “ঝুবার” ভাড়া করিয়া পূর্বাচলে চলিয়া গিয়াছেন। ইহাদের নিজ গাড়ি থাকিবার পরেও কেন তাহারা “ঝুবার” ভাড়া করিলেন তাহারও একখান গভীর কারন রহিয়াছে, তাহা হইল তাহাদিগনের ড্রাইভারগন যে তাহাদিগনের স্ব স্ব স্ত্রী এবং জামাইগনকে এই গোপন অভিসারের কথা “কুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ” এর মত “কিউকিলিশ” এর মতন করিয়া ফাঁশ করিয়া দিবেন। আপনি নিশ্চিত থাকুন আগামী ছয় মাসের মধ্যে তাহারা মানব মানবির আদিমতম যে আকাঙ্ক্ষা সেই রতি ক্রিয়ায় লিপ্ত হইয়া যাইবেন।

পরকীয়া করার আরেখান চমৎকার জায়গা হইল গিয়া আপিস। দেখিবেন আপনার পাশের সিটের সহকর্মী মাঝে মধ্যেই তাহার ডেস্ক হইতে উধাও হইয়া যাইবেন।আপনি হারিকেন জালাইয়াও তাহাকে আর খুজিয়া পাইবেন না। খোজ লইতে গিয়া জানিতে পারিবেন তবে একদিনে নয় দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর। দেখিবেন তিনি নির্দিষ্ট একজন মহিলা সহকর্মীর ডেস্কের আসেপাশে ঘুর ঘুর করিতেছেন এবং মোবাইল কর্ণ কুঠরের নিকট ধরিয়া ফিশ ফিশ করিয়া বলিতেছেন ইহা কি জামা পড়িয়াছ, ভাল লাগিতেছে না দেখিতে।তোমাকে যে গতকাল “ঝপারশ ওয়ার্ল্ড” হইতে শাড়ি কিনিয়া দিলাম উহা পরিলে না কেন? মহিলা সহকর্মী ফিশ ফিশ করিয়া বলিবেন,এত দামি শাড়ি কিনিয়াছি ইহা শুনিলে তো জামাই জিজ্ঞাসা করিয়া বসিবে মাসের এই মাঝখানে ইহা কিনিবার টাকা পাইলে কোথা হইতে। তাই চালাকি করিয়া এমন জায়গায় উহা রাখিয়া দিয়াছি জামাই মহাশয় কেন আমার এলাকার বিখ্যাত চোর “টেড়া মালেকও” আমার বাসায় চুরি করিতে আসিলে উহা খুজিয়া পাইবেন না। বেতন পাইবার পর জামাইকে বলিব বেতনের টাকা দিয়া কিনিয়াছি। ইহার পর মহিলা সহকর্মী বলিয়া উঠিবেন এই ফোন রাখ “সগির” ভাই বার বার তাকাইতেছেন,মনে হয় উনি সন্দেহ করিতেছেন। ইহারা সবধরনের সতর্কতা অবলম্বন করিয়া থাকেন ,যাহাতে কেহই তাহাদের এই পরকীয়া সম্পর্কে জানিতে না পারেন। কিন্তু মজার বিষয় হইল সব সতর্কতা অবলম্বন করিবার পরেও ইহা ছোটবেলায় যখন ফুটবল খেলিতাম তখন মাঝে মাঝে ফুটবলে এক প্রকার লিক হইত উহা ধরিতে আবার একটু সময়ও লাগিয়া যাইত,যাহাকে আমরা বান্দরকুলগন বলিতাম চোরা লিক। তো এই চোরা লিকের মতন তাহাদের পরকীয়ার সংবাদও এক সময় লিক হইয়া যায় প্রমানসহ। তখন দেখিবেন ইহারা কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগ বা এইচআর এ দৌড়াদৌড়ি শুরু করিয়া দিবেন ট্রান্সফারের জন্য।

বিদ্রঃ সংবিধিবধ্য সতর্কীকরণ এই যে, কেহ আবার আমাকে প্রশ্ন করিয়া বিব্রত করিয়া বসিবেন না যে,আমি কি করিয়া এইরূপ পরকীয়া বিশেষজ্ঞ হইয়া উঠিলাম। পরমেশ্বর আপনাকে আমাকে যে মস্তিষ্ক নামক গোলাকার একখান মহামূল্যবান অঙ্গ দিয়াছেন এবং তাহার ভিতর মিলিয়ন,বিলিয়ন নিউরন এবং চক্ষু নামক বিস্ময়কর বস্তু দান করিয়াছেন তাহা একটু প্রয়োগ করিলেই অনেক কিছু সম্পর্কে এমনিতেই জানিতে পারিবেন বাস্তবে আপনাকে উহা করিয়া শিখিতে কিংবা জানিতে হইবে না। যাহাকেই ভালবাসুন না কেন তাহাকে লইয়াই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাটাইয়া দিন। এই পরকীয়া নামক চাটনি আপনাকে সাময়িক রুচি বাড়াইয়া দিলেও,দিন শেষে আপনার নিজ গৃহের স্বামী অথবা স্ত্রীই আপনার শেষ ঠিকানা হইবে।