আসুন আরও একবার ঘন হইয়া বসিয়া এই বঙ্গীয় তল্লাটের পিতৃতান্ত্রীক সমাজ কাঠামো লইয়া একটু আলোচনা করিয়া লই:
লিখিবার শুরুতেই বলিয়া লই এই অধম কোনো লিঙ্গ প্রথায় বিশ্বাসী নহে,অর্থাৎ সমাজ শুধুই পুরুষের নহে ইহা নারীরও বটে এবং ইহা সমানভাবেই প্রযোজ্য।
এই তল্লাটের পুরুষগণ দেখিবেন সমস্ত বীরত্ব তাহার বিবাহিত স্ত্রীর সহিতই দেখাইবেন। ধরুন আপিসের বড় কর্তার ঝাড়ি নীরবে হজম করিয়া গৃহে প্রবেশ করিবার মাত্রই তিনি সিংহের ন্যায় গর্জন করিয়া বলিবেন আমার লুঙ্গি আর গামছা কই? শুরু হইয়া যাইবে এই লুঙ্গি আর গামছা যুদ্ধ। তাবৎ দোষ গৃহকর্তা চাপাইয়া দিবেন তাহার স্ত্রীর উপর যেন তাহার লুঙ্গি গামছা কিংবা অন্তর্বাস কোথায়,কখন,কি অবস্থায় রহিয়াছে তাহার খোঁজ রাখিবার একমাত্র টেন্ডার উনার স্ত্রীর উপর বর্তাইয়াছে।
আরও রহিয়াছে, আপিস হইতে নিজ গৃহে ফিরিয়া গৃহকর্তা এমন একখান ভাব লইয়া বসিবেন যে, উনি এই মাত্র লঙ্কা বিজয় করিয়া ঘর্মাক্ত হইয়া ফিরিয়া আসিয়াছেন। আর উনার গিন্নি সারাদিন গৃহে বসিয়া আনন্দ চিত্তে “ঝাস্টার প্লাস” এ হনুমান সিরিয়াল দেখিয়া কাটাইয়া দিয়াছেন। অথচ ভদ্র মহিলা যে,সেই সুবেহ সাদিকেই নিদ্রা হইতে জাগ্রত হইয়া জামাই মহাশয়ের নাস্তা হইতে শুরু করিয়া কি পোশাক পরিধান করিয়া আপিসে কিংবা ব্যবসাস্থলে যাইবেন তাহা আলমিরা হইতে নামাইয়া উহা যত্ন সহকারে আয়রন করিয়া,বাচ্ছাদের ইস্কুলের টিফিন প্রস্তুত করিয়া রাখিয়া তাহাকে ঘুম হইয়ে জাগাইয়া তুলিয়া দেন অথচ এই সময় উনি যে উচ্চ শব্দে নাসিকা গর্জন করিয়া ঘুমাইয়া ছিলেন তাহা বেমালুম ভুলিয়া যান।
এইবার আসুন গিন্নির পিত্রালয়ে যাওয়া লইয়া জামাই মহাশয়েরা কি করিয়া থাকেন তাহা একটু জানিয়া লই। স্ত্রী যখনই বলিবেন তিনি অনেকদিন যাবৎ নিজ পিত্রালয়ে গমন করেন নাহি সেইহেতু উনি কয়েকদিনের জন্য একটু নিজ পিত্রালয়ে ঘুরিয়া আসিতে চাহেন। আমরা পুরুষেরা সাথে সাথেই ব্রম্ম তালু গরম করিয়া বলিয়া বসিব বিবাহ করিয়াছি সেতো অনেক বৎসর হইয়া গিয়াছে আর বাচ্ছা কাচ্চাও হইয়া গিয়াছে। তাহারপরেও তোমার বাপের বাড়ি ঘন ঘন যাইবার পুরাতন অভ্যাসখানা দূর করিতে পারিলে না। খোঁজ নিয়া দেখিবেন এই বঙ্গীয় শার্দূল তাহার স্ত্রীকে শেষ যখন তাহার পিত্রালয়ে যাইবার সুযোগ দিয়াছিলেন তাহাও প্রায় বৎসর দেড়েক আগে। অথচ এই ভদ্রলোক ভুলিয়া গিয়াছেন যে,গত ছয় মাসে তিনি নিজ পিতা মাতাকে দেখিতে চার বার তাহার গ্রামের বাড়িতে গিয়াছিলেন।
এইবার আসুন গৃহের কাজ কর্ম লইয়া পুরুষগণ স্বীয় স্ত্রীগনের সহিত কিরূপ আচরণ করিয়া থাকেন তাহার ব্যবচ্ছেদ করিয়া লই। গৃহ কর্তার সাদা সার্টের কলার কেন পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় ফকফকা হয় নাই তাহা লইয়া প্রায়শই দেখিবেন তিনি স্ত্রীর সহিত কলহে লিপ্ত হইয়া পড়িবেন। উনি বেমালুম ভূলিয়া যাইবেন যে,উনি একজন সম্মানিত ভদ্র মহিলার সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইয়াছেন,কোনো মহিলা গৃহকর্মীর সহিত নহে। অথচ গিন্নি যখন বলিয়া থাকেন বাসায় আসিবার সময় “গুইল পাউডার” লইয়া আসিবে তখন উনি বিরক্তিরসহিত বলিয়া থাকেন গত সপ্তাহেও না এক কেজি আনিয়া দিলাম,উহা কি শরবত বানাইয়া গুলাইয়া খাইয়াছ?বুঝুন ঠেলা, ভদ্র মহিলা কি তাহা হইলে থালাবাসন মাজিবার জন্য আগে যে ছাই কিনিয়া ব্যবহার করা হইত তাহা দিয়া কি স্ত্রী তাহার এই পতিদেবের সাদা শার্ট তাহাও আবার পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় ফকফকা করিবেন?
বিদ্র: সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ইহা কোনো পুরুষ কিংবা নারী বা জেন্ডার বিদ্বেষী লিখা নহে। এই জগৎ যে এতদূর পর্যন্ত আসিয়াছে তাহা একমাত্ৰ পুরুষকূলের জন্য নহে তাহার সহিত সমভাবে নারীকূলেরও অবদান রহিয়াছে। অতএব আসুন নারীকূলের প্রাপ্য সম্মান তাহাকে প্রদান করি আর নারিকূলদের নিকট করজোড়ে নিবেদন করিতেছি আপনারাও আমাদিগণকে প্রতিপক্ষ না ভাবিয়া অপনাদিগনের সহিত চলার সাথী হিসাবে বিবেচনা করিবেন। জগৎ হোক সবার, আনন্দলোকের মঙ্গল যাত্রায় সামিল হউন একসাথে, হাতে হাত ধরিয়া…