আসুন আরও একবার ঘন হইয়া বসিয়া এই বঙ্গীয় বদ্বীপ নামক পাললিক অববাহিকার সুন্দরী ললনাগনদের লইয়া একখান যুৎসই আলোচনা করিয়া লই।

লিখিবার আগেই অপনাদিগনের নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করিয়া লহিতেছি এই অবোধের লিখিবার ব্যাপারে আপনাদের উৎসাহ দিবার জন্য। আমি হেনকালেও লিখিবার দুঃসাহস করিতে পাড়ি নাই। মাঝে মধ্যে দুই ছত্র লিখিয়া তাহার সহিত একটু রস যুক্ত করিয়া অপনাদিগনের সম্মুখে উপস্থাপন করিবার বৃথা চেষ্ঠা করিয়াছি মাত্র।

আসুন এইবার নারীকূলের মনের সামান্য ব্যবচ্ছেদ করিয়া লই।

বোধকরি প্রেম নামক ভয়াবহ ছোঁয়াচে এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিপদজনক এই অনুভুতির সহিত আপনাদিগনের কম বেশি দেখা হইয়াছিল। যম দূতের সহিত দেখা না হওয়াই ভাল তবে প্রেম দূতের সহিত দেখা না হইলে জীবন বোধকরি অনর্থক হইয়া যায়।

বালিকাগন প্রেমে পড়িবার হইতে তাহার প্রেমে বঙ্গীয় শার্দূলগন পড়িয়া যাইবেন ইহাই বেশি প্রার্থনা করিয়া থাকেন। ইহার বহুবিধ কারন রহিয়াছে। পাড়ার সবচেয়ে সুন্দরী ললনাগণ দেখিবেন বাসার সামনে হইতে রিকশা ঠিক করিবার কোনও সুযোগ নিজে নিবেন না। উনি রিকশার নিকটবর্তী হইবার পরেই দেখিবেন গলি হইতে “ঝাহরুখ খান” নামক এলাকার নতুন রোমিও সুপারম্যানের গতি লইয়া রিক্সার সম্মুখে আসিয়া বলিবেন এই রিকশা তোমার আপা যেইখানে যাইতে চায় লইয়া যাও, না করিবা না। ভাড়া কোনও বিষয়ই না। সুন্দরী দেখিবেন বালকের সাথে কোনও কথা না বলিয়া রিকশায় উঠিয়া যাইবেন এবং মুখ বাকাইয়া বালকের উদ্দেশ্যে বলিবেন তোমাকে না বলিয়াছি আমাকে দেখিলে রিকশার কাছে পঙ্গপালের ন্যায় উড়িয়া আসিবে না। তাহার পর বলিবেন এই রিকশা চলো,ক্লাসে দেড়ি হইয়া যাইতেছে। অথচ একবারের জন্যও বলিবেন না এই রিকশা,এই ছেলে ভাড়া বাবদ তোমাকে যা দিয়াছে তাহা ফেরত দিয়া দাও।

ছাত্র থাকিবার সময় এমনও দেখিয়াছি যে, সহপাঠীদের মধ্যে অনেক ব্যার্থ প্রেমিক ঘন্টার পর ঘন্টা তাহার ভাললাগার বালিকার জন্য তাহার বাড়ির সামনে দাঁড়াইয়া থাকিতেন কখন তাহার হবু প্রিয়তমা দুপুরের ভাত ঘুমের পড় বারান্দায় আসিয়া তাহার আলস্য ভাঙিয়া একটু হাই তুলিবেন আর তিনি তাহা বিদ্যুৎ চমকানোর ন্যায় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখিতে পাড়িয়া প্রেমের অতল গহ্বরে হারাইয়া যাইবেন। বলা বাহুল্য যে,এমন অনেক গোধূলি পার করিয়া রজনী শুরু হইয়া যাইতো কিন্তু তাহার প্রেমিকার দুপুরের ভাত ঘুম আর ভাঙ্গিত না। জানাইয়া রাখিতেছি যে, সেই সকল বালকগণ যাহারা এইরূপ ঘন্টার পর ঘন্টা দুই পায়ের উপর দাড়াইয়া থাকিতেন তাহাদের অনেকের নাকি ইদানিং বাত ব্যাথা ধরা পড়িয়াছে এবং তাহারা এই মধ্যে বয়সে আসিয়া, যৌবনের প্রারম্ভে যে অত্যাচার তাহাদের দুই পায়ের উপর করিয়াছিলেন তাহার ফলস্বরূপ সপ্তাহে দুইবার ফিজিওথেরাপি লইতেছেন।

আরও একখান বিষয় লক্ষ্য করিয়া দেখিবেন,যেই সকল ললনাগণ তাহার রূপ পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় এইরূপ মনোভাব পোষণ করিয়া থাকেন তাহারা একটু পর পর চুলের ঝামটা মাড়িবেন। আপনার সম্মুখে তিনি যদি পাঁচ মিনিট অবস্থান করিয়া থাকেন তো নিশ্চত থাকুন এই পাঁচ মিনিটে তিনি কম করিয়া হইলেও পনেরবার তাহার চুলে হাত দিবেন অথবা ঝামটা মারিয়া এই পাশের চুল ঐপাশে নিবেন কম করিয়া হইলেও পাঁচবার।

ইহাদের রিক্সা ঠিক করিতে দেখিবেন সর্বোচ্চ শাইট সেকেন্ড লাগিবে। অথচ একই রিকশাওলাকে আমি আপনি একই গন্তব্যে যাইতে শত সহস্রবার অনুরোধ করিলেও তিনি যাইবেন না। অথচ গলির মোড়ে আপনাকে রিক্সার জন্য প্রতিদিনই আধঘন্টার মতন অপেক্ষা করিতে হয়। ইহাদের ক্ষেত্রে দেখিবেন রিকশাওয়ালা পাড়িলেতো তাহাকে তাহার ঘরের মধ্যে গিয়া নামাইয়া দিয়া আসেন। অথচ আমি আপনি এক ইঞ্চি সামনে নামিতে চাইলে রিকশাওয়ালার চাকা হাইড্রোলিক ব্রেকের ন্যায় আটকাইয়া যায়।

আরও রহিয়াছে,পাড়ার মুদি দোকানের ছেলেটা এই সুন্দরীর নিকট একদিন ভাংতি ছিল না বলিয়া তাহার রিকশাভাড়া নিজ দোকানের ক্যাশ বাক্স হইতে বিনা বাক্য ব্যায়ে দিয়াছিলেন,যাহা আজ তিন মাস হইয়া গিয়াছে কিন্তু দোকানদার একবারের জন্যেও ওই সুন্দরী আপাকে মনে করাইয়া দেন নাই। মাঝে একদিন হয়তো এই আগুন সুন্দরী বলিয়াছিলেন,আপনি মনে হয় আমার কাছে কিছু টাকা পাইবেন। দোকানদার তাহার দুই পাটির বত্রিশ খান দন্ত বাহির করিয়া বলিবেন আপা সমস্যা নাই,একদিন দিলেই হইলো,আপনিতো আর আমাদিগনকে ছাড়িয়া চলিয়া যাইতেছেন না। অথচ আমি আপনি সকাল বেলা ভাংতি ছিল না বলিয়া এক শলাকা “টেনশন” সিগারেট লইয়াছিলাম আর তাহা রাত্রি বেলা দোকানের সামনে দিয়া যাইবার সময় দোকানদার পারিলেতো মাইক লাগাইয়া চিৎকার দিয়া বলিবেন,মামা সকালের একটা “টেনশন” সিগারেটের দাম বাকি রহিয়াছে। সবার সামনে আমার আপনার ইজ্জতের পুরান টায়ার খানি পাংচার করিয়া দিবে অথচ তাহার সুন্দরী আপার রিকশা ভাড়ার বাকি টাকা ভূলেও গত তিন মাস যাবৎ একবারের জন্যেও চাহিয়া দেখিলেন না। বুঝুন ঠেলা।

বিদ্র: সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ করা যাইতেছে যে,এই লিখার সহিত কোনও সুন্দরী ললনা কিম্বা নব্য অথবা পুরাতন কোনও রোমিও তাহার সহিত মিলাইয়া ফেলিলে তাহার দায় এই অপদার্থ লেখকের উপর চাপাইয়া দেওয়া মোটেও সমীচীন হইবে না। আর সকল আগুন সুন্দরীদের প্রতি রহিল সম্মান আর শ্রদ্ধা। আপনারা নারীকূল রহিয়াছেন বলিয়াই এই ধরণী তাহার পূর্ণতা পাইয়াছে।