চার্চ ল্যাংলির শিরোপা জয়ের পেছনে এক বাংলাদেশি’—এসেক্স কাউন্টি অনূর্ধ্ব–১৮ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে ল্যাংলির শিরোপা জয়ের খবরটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়েছিল এভাবেই।

সামি খাজার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডে হলেও তাঁর শিকড়টা কিন্তু বাংলাদেশেই। জন্মসূত্রে ‘ব্রিটিশ’ সামি নিজেও তার ‘বাংলাদেশি’ পরিচয়টা দিতে পছন্দ করে। ২০১৫ সালে এসেক্স কাউন্টির ফাইনালে ল্যাংলির শিরোপা জয়ে সে রেখেছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ফাইনালে তার গোলেই শিরোপা নিশ্চিত হয় ল্যাংলির। স্থানীয় গণমাধ্যমে সামির নামটি সে সময় উঠে এসেছিল বাংলাদেশি হিসেবেই। এই সামিই তিন বছর ধরে ফুটবল শিখছে হ্যারি কেনের ক্লাব টটেনহাম হটসপারের একাডেমিতে।

সামির বাবা আফাক খাজা বাংলাদেশি। মা পলা খাজার রক্তে বইছে বাঙালি-ব্রিটিশ দুই পরিচয়ই। আফাকের সঙ্গে কিন্তু পলার পরিচয় এই ঢাকাতেই। সেই কিশোর বয়সে। কিন্তু পলার পরিবার ইংল্যান্ডে চলে যাওয়ার পর দুজন বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। কিশোর বয়সের ভালো লাগার টানেই আফাক ১৯৯০ সালে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। সেখানে গিয়ে সাত বছর পর খুঁজে বের করেন কিশোর বয়সের ‘প্রেম’ পলাকে। এরপর দুই পরিবারের সম্মতিতে লন্ডনেই আফাক ও পলার দুই জোড়া হাত এক হয়ে যায়। এই দম্পতিরই দ্বিতীয় সন্তান সামি। জন্ম ১৯৯৮ সালে। সামির আগে অবশ্য আফাক-পলার কোল আলো করে আসে মেয়ে আয়েশা।
সামি ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের পোকা। ছয় বছর বয়সেই এলাকার ক্লাব ল্যাংলিতে তার যাওয়া-আসা। টুকটাক খেলতে খেলতেই ল্যাংলির কোচ ম্যাক রেইডের চোখে পড়ে যায় সামি। আফাকের কাছে এসে রেইড অনুরোধ জানায়, তাঁর ছেলেকে যেন পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে নিয়মিত ফুটবল খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। সামির বড় ফুটবলার হওয়ার সম্ভাবনা যে যথেষ্টই।

বাবার অনুমতি মিলেছিল সঙ্গে সঙ্গেই। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সামিকে। হয়ে ওঠে ল্যাংলির জুনিয়র দলের অধিনায়ক। স্থানীয় সমাজ এখন আফাককে চেনে একজন সম্ভাবনাময় ফুটবলারের বাবা হিসেবেই।

২০১৫ সালে এসেক্স কাউন্টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে সামির গোলটা ভাসে তার চোখের সামনেই, ‘ক্লাবের কোচের কাছ থেকে শুনেছিলাম সামি ভালো খেলে। কিন্তু বাঁ পায়ে করা ওই গোলটার পরে আমি অবাক হয়ে যায়। ইংল্যান্ডে জন্মালেও সামির শরীরে বইছে বাংলাদেশির রক্ত। সে কীভাবে এত দূর থেকে গোলটা করল, আমি ভেবে পাই না।’
কিন্তু একমাত্র ছেলের রেজাল্ট খারাপ হওয়ায় তার কপালে চিন্তার ভাঁজ। কিন্তু সামি বাবাকে বলে দিয়েছে, যেহেতু সে নিজের ভবিষ্যৎটা ফুটবলেই গড়বে, তাই পড়াশোনাটা একটু খারাপ হলে অসুবিধা নেই।’হ্যারি কেন টটেনহাম ড্রেসিং রুমের যে জায়গাটিতে বসেন, সেখানে সামি। ছবি: সংগৃহীত
হ্যারি কেন টটেনহাম ড্রেসিং রুমের যে জায়গাটিতে বসেন, সেখানে সামি। ছবি: সংগৃহীত

ফুটবলে ভবিষ্যৎ গড়তেই সামি নাম লিখিয়েছে টটেনহাম একাডেমিতে। সেখানে প্রায় ৬০০ জন ছেলের মধ্যে সুযোগ পাওয়া ২০ জনের একজন সামি। ফলে তার সামনে খুলে যায় হোয়াইট হার্ট লেনের সদর দরজা। সেখানে প্রায়ই নাকি দেখা হয় ইংলিশ তারকা হ্যারি কেনের সঙ্গে। মাঝে মাঝে গিয়ে তো বসা হয় ড্রেসিংরুমে হ্যারি কেনের বসার জায়গাতেও। এ বছরেই তিন বছরের কোর্স পূর্ণ হবে তার। এরপরে তো তার সামনে পেশাদার ফুটবলের বড় একটা জগৎ খোলা থাকছেই। তবে তার বাবার ইচ্ছে যেখানেই যাক, একাডেমি থেকে বের হওয়ার পরে সামিকে আগে নিয়ে আসা হবে বাংলাদেশে।

ইতিমধ্যেই সামির বাবা আফাক স্ত্রী পলাকে নিয়ে বাংলাদেশে থিতু হয়েছেন ২০১৭ সালের এপ্রিলে। মেয়ে আয়েশাকে বিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশেই। মোটকথা, তিনি এখন লন্ডনের জীবন ছেড়ে বেছে নিয়েছেন মাতৃভূমি বাংলাদেশকেই। বড় খেলোয়াড় হওয়ার নেশায় আর টটেনহাম একাডেমিতে প্রশিক্ষণের কারণে সামিই রয়ে গেছে লন্ডনে। কিন্তু আফাকের ইচ্ছে ছেলেটাকেও বাংলাদেশে নিয়ে আসার। পরিচিত করে দিতে চান বাংলাদেশের ফুটবলে। একমাত্র ছেলেটা যদি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারে, তাহলে সেটা হবে নাকি তাঁর জন্য অনেক গর্বের, ‘আমার ছেলেটা বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারলে আমার জন্য খুবই গর্বের বিষয় হবে। আমার ইচ্ছে আগস্টেই ওকে দেশে নিয়ে আসব।’