কিছু দিন আগে আমার কোলকাতার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড (!!) র সাথে কথা হচ্ছিল। কথা না বলে তর্ক বলাই ভাল।
কি নিয়ে এত তর্ক!!
তার কথা আমাদের তার মত সাত্য নাদেলা নাই, সুন্দর পিচাই নাই, ইন্দ্রা নুয়ি নাই —আমরা খালি সাকিব আল হাসান, ড:ইউনুস স্যার, রুনা লায়লা ম্যাডাম নিয়েই লাফালাফি করি। শুনে আমার খারাপ লাগেনি বরং হাসি পাচ্ছিল। কারন অল্প জানা কত ভয়ানক!!
আমাদের আছে কত জন কিন্তু তারা নীরবে নিভৃতে কাজ করে যান।
আমরা হয়ত অনেকে জানি আবার অনেক জানিনা –
তাও আমি কয়টা নাম আজকে উল্লেখ করতে চাই।
(এখানে কাজ বা বয়সের ভিত্তিতে আমি লিখিনি, যার নাম আগে মাথায় এসছে তাকে নিয়েই লিখছি)
১. ওমার ইশরাক
এই ভদ্র লোক এখন chairman এন্ড CEO of Medtronic. Medtronic হলো ওয়ার্ল্ড এর লিডিং মেডিকেল টেকনোলজি কোম্পানি। এর আগে ইনি প্রেসিডেন্ট এন্ড সি ই ও ছিলেন GE health care system এর। উনার সম্পর্কে লিখতে গেলে কয়েক পাতা শেষ হবে। আপনার জানতে চাইলে অতি অবশ্যি গুগল আপা (নাকি ভাইয়া? ) র সাহায্য নিবেন।
২.সালমান খান
ইনি দাবাং সালমান খান নহে। ইনি আমাদের সালমান আমিন খান। জটিল জিনিশ করে ফেলেছেন। অনেকেই খুব ভাল চেনেন। কত কি বিশেষণ দেব? Educator ,entrepreneur……খান একাডেমী র নাম আমরা সবাই কম বেশি জানি। ইনি সেই খান একাডেমি র ফাউন্ডার। কি করে খান একাডেমি হল সে এক মজার ইতিহাস। বিল গেটস নিজেই ‘সাল’ কে এই জেনারেশন এর টিচার খেতাব দিয়েছেন। ৬বিলিওন ডলার বিল গেটস থেকে, ১৩বিলিওন ডলার গুগল থেকে তার খান একাডেমি কে দেয়া হয়েছে তার অসামান্য অবদানের জন্য। খান একাডেমি হল অনলাইন এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম যেখানে ৬৫০০র বেশি ম্যাথম্যাটিকস আর সাইন্স রিলেটেড ভিডিও আছে যার মাধ্যমে যে কোন খানে বসে আপনি শিখতে পারেন!!
৩.জাওয়েদ কারিম
কো ফাউন্ডার অফ ইউ টিউব 🙂
(ইনার জন্য এর বেশি এক্সপ্লেনেশন দরকার পড়েনা 🙂 )
৪. এহসান হক
ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (MIT) এর নাম আমরা সবাই জানি। ২০১৬ সালে MIT থেকে টপ ইয়ং ইনোভেটরস এর লিস্টে এই ভদ্র লোক জায়গা করে নিয়েছেন। যে লিস্ট এ কিনা ফেসবুক থেকে মার্ক জাকারবার্গ, গুগল থেকে larry pege, Yahoo থেকে Jerry yang সহ বহু নামি দামি লোক এর নাম আছে।
আর এই লিস্ট করা হয়েছে -পৃথিবী কে বদলে দেয়ার যে অবদান তারা রেখেছেন সে কারনেই। উদয়ন স্কুল আর ঢাকা কলেজের এই ছাত্র ওয়াল্ট ডিজনি ল্যান্ড ল্যাবরেটরি তে একটা রোবট বানিয়ে তাক লাগান যে কিনা দেখতে, শুনতে আর অল্প বিস্তর চিন্তাও করে!!! ২০১৩তে “মুড মিটার “আবিষ্কার করেন যেটা কিনা আপনার ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন থেকেই আপনার মুড কি -সেটা বলে দেবে,
অবিশ্বাস্য, তাইনা???
আরো আছে —-মন ভাল করা সব গল্প
৫.রাগীব হাসান
ব্যাক্তিগত ভাবে আমার খুব প্রিয় মানুশ।
চিটাগাং কলেজিয়েট স্কুল আর বুয়েট এর ছাত্র বার্মিংহামে Alabama university তে আসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত আছেন। মাত্র ৩৮বছর বয়সী এই ব্যক্তি শিক্ষক.কম প্রতিষ্ঠা করেন।
শিক্ষক.কম অনলাইন ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম যেখানে সারা দুনিয়ার সব বাংলা ভাষাভাষী রা বিনামূল্যে বাংলায় যে কোন বিষয়ে লেকচার দেয়া বা নেয়া করতে পারেন।
গবেষণায় হাতে খড়ি, বিদ্যা কৌশল, মনপ্রকৌশল নামে বেশ কিছু বই এর রাইটার ও তিনি।।
৬.ওয়াসফিয়া নাজরীন –
আমি খুব লাকি যে আমি আমার স্কুলের বান্ধবি র কথা গর্ব নিয়ে লিখতে পারছি। নি:সন্দেহে তাকে নিয়ে আমরা মুখ ভরে বলতে পারি।
কারন???
কারন পৃথিবী র সর্বোচ্চ সাত শৃঙ্গ সে জয় করেছে।
She conquered seven summits of the world!
ফ্রস্টিং হয়ে তার আঙুল পচে ফেলে দেবার মত অবস্থা হয়েছিল, সে দমে যায়নি।
তিব্বত এ উগ্রবাদী দের বন্দুকের গুলি র মুখ থেকে বেচে এসেছে।
তার একেক টা পর্বত জয় করার গল্প কল্পকাহিনী কেও হার মানায়।
সম্প্রতি national geographic channel তাকে প্রথম মহিলা হিসেবে সম্মানিত করেছে (জি, প্রথম মহিলা!!) যে কিনা একই সাথে adventurer of the year 2014/15 আর emerging explorer designation খেতাব জিতেছে!!!
এ ছাড়া অয়াহিদ ইবনে রেজা হলিওড এ, নাসায় মাহমুদা সুলতানা দাপিয়ে বেড়িয়েছে।
আসলে ইনারা নিজেরা নিজেদের হাইলাইট করেন না বা করেন নি। নিজের মত করে কাজ করে যাচ্ছেন।
আমাদের আছে অনেক কিছুই, আমাদের প্রাইড; যা পড়লে দেখলে নিজের অজান্তে ই শিহরিত হতে হয়।
বাংলাদেশ এর মানুষের প্রতিভা আছে, যোগ্যতা আছে শুধু দরকার একটু পরিশ্রম আর নিজেকে শেইপ আপ করার উদ্যম!
আর কিচ্ছু না!!