আমার ছেলেবেলার কোন একটি বৃহস্পতিবার

১৯৯২
আজ বৃহস্পতিবার হাফ স্কুল, তার মানে আজ থেকে দেড়দিন স্কুল বন্ধ, আমাদের প্রস্তুতি থাকত এক এক ছুটির দিন আলাদা, বৃহস্পতিবার মানেই অন্যরকম, ক্লাস বেশি হবে না আজ কিছুতেই। পলিতিন এর ভিতর কিছু হলুদ, লবন, গুড়া মরিচ আর তেল এক সাথে করে নিয়ে গেছি, কারন আজ ভিন্ন কিছু করতে হবে, স্কুল শুরু হবার পরই কানাকানি শুরু হয়ে গেছে , কি করব না করব , শেষমেষ আমার কথাই ঠিক হল , কারন আমার জোগাড়যন্ত্র প্রায় রেডি ।

গরমের দিন হওয়াতে স্বভাবতই মামাবাড়ির পাশের মধুমতি নদীকেন্দ্রিক কিছু হত । বৃহস্পতিবার স্যার/ ম্যাডাম রা কম আসতেন, দেখা যেত ৩ টা ক্লাস একই স্যার করাতেন, ১ম ক্লাস হবার পর আমাদের ও অস্থির লাগত, মনের ভিতর উশখুশ , কাহাতক আর এই যন্ত্রনা সহ্য করা যায়, স্যার ছুটি চাইলেও ছুটি দেবেন না নিশ্চিত, সুতরাং সেই পুরান পদ্ধতি যদিও এখনো কাজ দেয় কিনা যানি না । কারন বেশীর ভাগ স্কুলে এখন সিসি ক্যমেরা লাগান থাকে ।

স্যার যেই ব্ল্যাক বোর্ডে ফিরত অমনি একজন চুপচাপ পিছন দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেত, এই ভাবে একে একে আমি সোহেল, আশরাফ, সহিদ, আশিস,নন্দ, শুভাশিস, বেরিয়ে পড়তাম, স্কুল থেকে একটু দূরে, অপেক্ষা করতাম ৫ মিনিটের ভিতর কেউ না আসলে আর কিসসু করার নেই ।

নন্দরে পাঠিয়ে দিয়েছি বাড়ী আমারা নেমে পড়েছি নদীতে তে পাড়ে বই খাতা লুকিয়ে, জামা কাপড় সব ভিজানো যাবে না, নদীর এক অংশ পার হয়েই তবে চর, কিন্তু নেমেই প্লান প্রোগ্রাম সব ভেস্তে গেল, ডুবাডুবিতে লেগে গেল সবাই, আমি পকেট এর ভিতর সেই পলিতিন প্যাকেট হাতে এক হাত দিয়ে সাঁতরে নিয়ে নদী পার হয়ে চরের শুকনা যায়গায় এসে পড়লাম ।

একটু পরে সবাই এসে পড়লে, লেগে পড়লাম কাজে , ধান কাটার পর মানুষের পায়ের ছাপ পড়া ছোট ছোট গর্তে বড় বড় গলদা চিংড়ী এসে থাকত প্রায়, কপাল ভাল হলে তো কথাই নেই, লাভ ঝাপ না করেই ধরার চেষ্টা বৃথা গেল, চিংড়ী বাহিনী বিনা যুদ্ধে ধরা না দেয়ার পন করেছে । কিছু মাছ (সব মিলিয়ে ১ কেজি র মত) আমরা ধরতে পেরেছিলাম, এর ভিতর সোহেল এর হাতের আগুল এর মাঝে প্রায় ফেড়ে ফেলল , কিন্তু সে সেটা তারপর ও ছাড়ে নেই, কিন্তু বেচারার রক্ত থামাতে পারি না কিছুতেই , রক্ত দেখে অর মাথায় রক্ত চড়ে গেল মনে হয়, বেচাড়া চিংড়ীর মাথা এক মোচড় দিয়ে ফেলে দিয়ে বাকীটা কচ কচ করে চিবিয়ে খেয়ে ফেলল, আমরা কেউ সবাই কাজ কারবার দেখে হেসেই খুন, কিন্তু সে তখন ও অগ্নিমুতি ।

ওই দিকে বেচারা নন্দলালের দেখা নেই, অরে পাঠালাম বাড়ী কয়লা আনতে, খিদের ছোটে মনে হচ্ছে চিংড়ী গুলিকে এইবার কাচাই খেয়ে ফেলি, অনন্ত কাল পরে মনে হয় এল আমাদের নন্দলাল । একটা মাটির মালসায় করে জলন্ত কয়লা, নদী পার হতে গিয়ে সে কি করে কয়লা ভিজায়নি সেটা একটা রহস্য, মাছ গুলি খসা ছাড়িয়ে , মাথা পরিষ্কার করে , দাড়ার কাটা গুলি এক সাথে বেধে , সাথে আনা তেল মসলা গুলি মাখালাম সেই পলির ভিতেরই, এই বার একটা ডালের সাথে ঝুলিয়ে , চার ধারে সবাই আধা সোয়া অবস্থায় ফু দিচ্ছি সবাই। একজন বলল এই কাজ হচ্ছে না জোরে ফু দে সবাই, একটা গোল পাত্রে চার ধারে সবাই ফু দিলে যা হবার তাই হল , সবাই ফু দিচ্ছি আর সবার চোখে মুখে চাই ধোয়া একসাথে ডুকে অস্থির অবস্থা, ব্যাস লেগে গেল মারামারি, কে কাকে মারছি আসলে কেই দেখতে পাইও নি ভাল করে  

একটু পরে নদীর থেকে চোখমুখ ধুয়ে এসে দেখি আমাদের চিংড়ী গুলি লালচে রং ধারন করে রীতিমত ঝলসে গিয়ে চড়চড় করছে , জিভে সবার জল চলে আসার লক্ষন আমাদের , জানি যারা পড়বেন তাদের একই অবস্থা হতে পারে,

বিকেলের আগেই বাসায় ফিরে এসে ছিলাম সবাই ।

যারা সেদিন আসতে পারে নি, তাদের নালিসে স্কুল পালানোর একদিন পর শনিগ্রহ আমাদের সবার পিঠের পর দিয়ে অতিক্রম করেছিল আর কি , মার টার খেয়ে আপনারা ভাবছেন যে আমাদের শিক্ষা হয়েছিল, আরে ধুর  বয়েই গেছে তাতে আমাদের, টিফিনের সময় প্লান করছি ,একটু দূরের একটা পোড়োবাড়ী তে পিচফল ( খাকি রঙ্গের ছোট ছোট লিচুর মত থোকা থোকা ধরে ) পেকেছে , দলবল নিয়ে যেতে হবে…………  ।

কেমন লাগলো ?
জানাতে ভুলবেন না কিন্তু ।

https://www.facebook.com/groups/swapybooks যোগ দিতে পারেন আমাদের এই গ্রুপে 🙂