নিয়তি তার শিক্ষা দেয়ার জন্য সব সময় তৈরি থাকে

শেষের দিকে আব্বাসীয় খিলাফত শুধু সামরিক শক্তিতেই নয়, নৈতিকভাবেও অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিল। হালাকুর বাগদাদ আক্রমণের গুঞ্জন যখন কাপুরুষ মুস্তাসিম বিল্লাহর কানে পৌঁছাল, ভীত সন্ত্রস্ত মুস্তাসিম তার সভাসদদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। সেই সময় মুস্তাসিমের প্রধান উজির ইবনুল আলকেমি পরামর্শ দিল সেনাবাহিনীর সংখ্যা কমিয়ে ফেলার জন্য। কারণ হিসাবে সে দেখাল যেহেতু যুদ্ধ করে হালাকুকে পরাজিত করা অসম্ভব তাই অযথা এত বড় বাহিনী পুষে হালাকুর কুদৃষ্টিতে পড়ার কোন মানেই হয়না। তারচেয়ে বরং খলিফার উচিত হবে সৈন্য সংখ্যা কমিয়ে হালাকুর আস্থা অর্জন করা এবং সন্ধির চেষ্টা করা।

ভয়ানক ব্যাপার হল এই আলকেমি আসলে মোঙ্গল গুপ্তচর। বলে রাখা হল এই বিশ্বাস ঘতক আলকেমির সাথে রসায়নে শাস্ত্রের কোন সম্পর্ক নেই।

বাগদাদের প্রায় প্রতিটা প্রান দংশের পর মুস্তাসিম বিল্লাহকে হালাকু কিছুদিন বাঁচিয়ে রেখেছিল বাগদাদের ধ্বংসযজ্ঞ স্বচক্ষে দেখার জন্য। একে একে তার সামনেই হত্যা করা পরিবারের সবাইকে।বলা হয়ে থাকে বাগদাদে রাজপ্রসাদের নিচে লুক্কায়িত ছিল আব্বাসীয়দের বিগত ৫০০ বছরের সঞ্চিত বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও অন্যান্য ধন সম্পদ। মুস্তাসিমকে পিষে মেরে ফেলার আগে নাকি হালাকু সেগুলো খোঁজ জানতে চেয়েছিল। সেই সম্পদ তুলে নেওয়ার পর ক্ষুধার্থ মুস্তাসিম হালাকুর কাছে কিছু খাবার চাইলে হালাকু তাকে অপমান করে বলেছিল এই স্বর্ণ চিবিয়ে খেতে। হালাকু আরও বলেছিল নির্বোধের মত এই সম্পদ জমিয়ে না রেখে এগুলো দিয়ে বিরাট বাহিনী তৈরি করতে পারতে। প্রহরী বিহীন নগরে এত বিশাল ফটক না রেখে ফটকের লোহা গলিয়ে সৈন্যদের অস্ত্র বানাতে পারতে। হালাকুর এই কথাগুলো স্পষ্ট বুঝিয়ে দেয় ভোগ বিলাসে মত্ত শেষের দিকের।আব্বাসীয় শাসকদের অদূরদর্শিতা কত বড় সর্বনাশ ডেকে এনেছিল। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হল বিশ্বাসঘাতক ইবনুল আলকেমি তার প্রাপ্য পুরষ্কারটি কিন্তু ঠিকই পেয়েছিল। যেহেতু সে নিজের খলিফার সাথেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছে সেই অপরাধে মোঙ্গলরা তাকেও হত্যা করেছিল করুণভাবে। এভাবে মীরজাফরের মত আলকেমিও পেয়েছিল তার অপকর্মের উচিত সাজা।

অথচ বাগদাদ ধ্বংসের ঠিক ৪০ বছর আগে যখন চেঙ্গিস খান আব্বাসীয়দের প্রতিবেশী খোয়ারেজেম সাম্রাজ্য ধ্বংস করেছিল এতে আব্বাসীয়দের প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল। কেননা তারা মনে করত খোয়ারেজেম সাম্রাজ্যের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা তাদের আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য হুমকি। অন্য একটা কারন খোয়ারিজমীয়রা ছিল সুন্নি ,

শিয়া সমর্থক মুস্তাসিম বিল্লার মন্ত্রী ইবনুল আলকামি সুনি্নদের সমূলে নিধন করার জন্য হালাকু খানকে খোয়ারিজমীয়দের আক্রমণ করতে প্ররোচিত করেন এবং সর্বপ্রকার সাহায্যদানের প্রতিশ্রুতি দেন। মুস্তাসিম বিল্লাহ তা মেনেও নেন, বিজয়প্রাপ্ত হয়ে হালাকু খান যখন বাগদাদ নগরী ধ্বংস করে এবং অতীব নৃশংসভাবে নাগরিকদের হত্যা করতে থাকে, তখন শিয়া; সুন্নি এবং হানাফি, শাফেয়ি, অন্য ধর্মীয় কাউকে ছাড়েনি।

খোয়ারিজমীয়দের পতনের খবরে মুস্তাসিম বিল্লাহর বাগদাদ উৎসব করলেও , বাগদাদের ধংসের খবরে আফসোস করার মত লোক জীবিত ছিল না ।